স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা | ২৫ মে ২০২৫
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সেনাসদরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বরং, উভয়পক্ষ ‘একসঙ্গে, সমঝোতার মাধ্যমে’ দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাসদর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বার্তা দেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
‘সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। একে অপরের সঙ্গে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাইরে যেভাবে বিভেদ নিয়ে কথা হচ্ছে, তা পুরোপুরি অপব্যাখ্যা।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকার নির্দেশ দিলে সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে। মব ভায়োলেন্স বা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান নেবে।”
নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়া উচিত’—এমন মন্তব্যের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ানো হয়েছে।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “অফিসার অ্যাড্রেস হচ্ছে অভ্যন্তরীণ একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান, যেখানে সেনাপ্রধান দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেখানে এমন কোনো বক্তব্য দেননি, যা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো অবস্থানকে তুলে ধরে।”
সীমান্ত পরিস্থিতি ও মানবিক করিডর
মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতিকে ‘সংবেদনশীল’ উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, “মানবিক করিডরের নামে দেশের স্বার্থহানিকর কোনো কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না। কোনো দেশের পুশইন বাংলাদেশে কাম্য নয়।”
তিনি জানান, বিজিবি ইতিমধ্যে সীমান্তে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশে যুক্ত হবে।
অস্ত্র উদ্ধার ও চাঁদাবাজি দমনে সেনাবাহিনীর অভিযান
সেনাসদরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে সেনাবাহিনী ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। গত এক মাসে ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এখন পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে সেনাবাহিনী। এখনো ৩৬ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঈদ ও চাঁদাবাজি দমনে বিশেষ টহল
আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল পরিচালনা করবে। যানবাহনের গতি, টিকিট কালোবাজারি ও পশুর হাটে চাঁদাবাজি রোধে নজরদারি জোরদার করা হবে বলে জানানো হয়।
লালমনিরহাট বিমানবন্দর প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা
লালমনিরহাট বিমানবন্দর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, “এটি অনেক পুরোনো একটি বিমানবন্দর। এখন প্রয়োজন অনুযায়ী এটি সচল করা হচ্ছে। এখানে একটি এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও এভিয়েশন কার্যক্রম চালু হবে। তবে এটি চীন ব্যবহার করবে কি না, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।”