ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫:
দেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত প্রায় সব রাজনৈতিক দল এবং শতাধিক অনিবন্ধিত দল ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার “শুধুমাত্র একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়” — এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই তার এই বক্তব্যকে “নির্বাচনের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
বিএনপি ও অধিকাংশ দলের একমত: ডিসেম্বরে নির্বাচন চাই
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমি নিজেই ৪০টিরও বেশি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সবাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে। প্রধান উপদেষ্টা কী উদ্দেশ্যে এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর কথা বললেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
একই সুরে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “গণতান্ত্রিক চেতনার দলগুলো অবিলম্বে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের পক্ষে। আর যারা জনগণের সাথে নেই, তারাই নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়।”
বিভিন্ন মত, এক লক্ষ্য: অবিলম্বে নির্বাচন
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. ইরান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ একাধিক দলের নেতারা একইসাথে ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে “অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর” বলে মন্তব্য করেছেন।
বাম ও মধ্যপন্থী জোটের প্রতিক্রিয়া
বাম গণতান্ত্রিক জোট এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে “দুরভিসন্ধিমূলক” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, “এই ধরনের মন্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে আর রাজনৈতিক সংকট বাড়ায়।” বিবৃতিতে বলা হয়, “নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি থাকলে নভেম্বরেও ভোটগ্রহণ সম্ভব। কালক্ষেপণ অগ্রহণযোগ্য।”
নতুন দলগুলোর অবস্থানও এক
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, গণফোরাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, ১২-দলীয় জোট, মুক্তিজোটসহ অনেক নতুন এবং ছোট রাজনৈতিক দল একইসাথে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
সারসংক্ষেপে
রাজনৈতিক অঙ্গনের অভিমত পরিষ্কার—এদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি সময়োপযোগী, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরি। বেশিরভাগ দল একবাক্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিস্ময় ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের বিবৃতি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।