📅 প্রকাশকাল: ২২ জুন ২০২৫
✍️ নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
বাজারে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের ‘ডি-রিস্কিং’ প্রবণতা বৃদ্ধি
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সামরিক উত্তেজনা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রযুক্তি নির্ভর বাণিজ্যবিরোধ—এই দুটি বৈশ্বিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ব্যাপক দরপতন হয়েছে, যার চাপ পড়েছে মার্কিন এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর।
📉 বাজার সূচকের চিত্র:
শনিবার (২১ জুন) প্রকাশিত এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী:
-
এসঅ্যান্ডপি ৫০০: ০.২% পতন, দাঁড়িয়েছে ৫,৯৬৭ পয়েন্টে
-
নাসডাক কম্পোজিট: ০.৫% পতন, দাঁড়িয়েছে ১৯,৪৪৭ পয়েন্টে
-
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ: সামান্য ০.১% বেড়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা এই পতনের অন্যতম কারণ।
⚠️ টেকনোলজি যুদ্ধের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনে প্রযুক্তি সরবরাহে নতুন বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনা এবং সাপ্লাই চেইনে বিঘ্নের আশঙ্কা চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এএমডি, এনভিডিয়া, ইনটেলের মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে।
🗣️ বিশ্লেষকদের মন্তব্য:
অ্যাডাম সারহান, ৫০ পার্ক ইনভেস্টমেন্টস-এর বাজার বিশ্লেষক বলেন,
“মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাজারে উদ্বেগ তৈরি করছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ সম্পদে অর্থ স্থানান্তর করছেন, যার ফলে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে।”
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার স্থিতিশীল রাখলেও, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলো এখন অনেক বেশি সতর্ক ভূমিকা নিচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কিছু শেয়ারের দর বাড়লেও সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক।
💬 বাজারে ‘ডি-রিস্কিং’ প্রবণতা বৃদ্ধি
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অর্থবাজারে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হচ্ছে ‘ডি-রিস্কিং’। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা এখন ঝুঁকিপূর্ণ খাত থেকে মূলধন সরিয়ে নিরাপদ সম্পদে (যেমন গোল্ড, বন্ড, ডলার) স্থানান্তর করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য দ্বন্দ্বের এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রযুক্তি শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে চাকরি, উৎপাদন এবং ভোগের ওপর।
📌 সংশ্লিষ্ট কোম্পানির চিত্র:
-
ক্রোগার ও কারম্যাক্স: কিছুটা শেয়ার মূল্যবৃদ্ধি
-
এনভিডিয়া, ইনটেল, এএমডি: টেক-সেক্টরের নেতিবাচকতার কেন্দ্রে
-
গ্লোবাল ETF ও মিউচুয়াল ফান্ড: নিরাপদ সম্পদে স্থানান্তরের কারণে অস্থিরতা
🔍 বিশেষ বিশ্লেষণ: বিশ্ব অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তেলের দামে বড় উত্থান হতে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি করবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রযুক্তি বিরোধ যদি নিষ্পত্তি না হয়, তবে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে বড় রকমের বিঘ্ন ঘটতে পারে, যা ২০২০ সালের মহামারির পর নতুন করে বিশ্বকে অর্থনৈতিক দুরবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
📎 সংক্ষেপে:
বিষয় | তথ্য |
---|---|
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ | ০.২% পতন |
নাসডাক | ০.৫% পতন |
প্রধান কারণ | টেক উত্তেজনা ও যুদ্ধ |
ঝুঁকি হ্রাস | বিনিয়োগকারীদের ‘ডি-রিস্কিং’ প্রবণতা |
ভবিষ্যৎ আশঙ্কা | মুদ্রাস্ফীতি, উৎপাদন হ্রাস, বাজার সংকোচন |
📌 পাঠকের জন্য পরামর্শ:
যাঁরা বিদেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন বা রেমিট্যান্স-নির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের এখন অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। মার্কিন সুদনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এবং চীনের সঙ্গে প্রযুক্তি উত্তেজনার পরবর্তী দিক নির্দেশনাগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখুন।