অর্থনীতি ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজার ও জ্বালানি মূল্যে। সোমবার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে, অপরদিকে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রপ্তানি রুট হরমুজ প্রণালি ঘিরে এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আবারও তেলের বাজারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছেন। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ২.৭ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৭৯.১২ ডলার, আর যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫.৯৮ ডলার। তবে দিনের শুরুতে দাম আরও বেশি বেড়েছিল, যা পরে কিছুটা কমে আসে।
শেয়ারবাজারে চাপ
সপ্তাহের শুরুতে এশিয়ার বেশিরভাগ শেয়ারবাজারেই পতন দেখা গেছে। এমএসসিআই-এর এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) কমেছে ০.৫ শতাংশ এবং জাপানের নিক্কি সূচক কমেছে ০.৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচারস কমেছে ০.৫ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচারস কমেছে ০.৬ শতাংশ।
ইউরোপীয় বাজারেও পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে—ইউরোস্টক্স ৫০-এর ফিউচার ০.৭ শতাংশ, ডিএএক্স ফিউচার ০.৭ শতাংশ এবং এফটিএসই ফিউচার ০.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
হরমুজ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেলের সরবরাহ-নির্ভর হরমুজ প্রণালি যদি আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক সংকট তৈরি হতে পারে। কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার পণ্য বিশ্লেষক বিবেক ধর সতর্ক করে বলেন, “হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ না করেও ইরান যদি কৌশলগতভাবে কিছু ঝুঁকি তৈরি করে, তবুও তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছুঁতে পারে।”
সোনা ও মুদ্রাবাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা ও ডলারের মান বাড়ে। তবে এবার এখনো পর্যন্ত সেই প্রবণতা তেমন শক্তিশালী নয়। সোমবার সোনার দাম সামান্য ০.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্সে ৩,৩৬৩ ডলার।
মুদ্রাবাজারেও কিছুটা অস্থিরতা দেখা গেছে। জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান বেড়েছে ০.৩ শতাংশ, প্রতি ডলার ১৪৬.৪৮ ইয়েন। ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান ১.১৪৮১ ডলার এবং ডলার ইনডেক্স দাঁড়িয়েছে ৯৯.০৭৮।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ ও সুদহার
যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ২ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৪.৩৯৭ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, যদি তেলের দাম দীর্ঘমেয়াদে বাড়ে, তাহলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ পড়বে, যার প্রভাব পড়বে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে।
বর্তমানে বাজারে ধারণা রয়েছে যে, ফেডারেল রিজার্ভ আগামী ৩০ জুলাইয়ের বৈঠকে সুদের হার কমাতে পারে না। যদিও ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জুলাইয়েই হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে বেশিরভাগ কর্মকর্তা, বিশেষ করে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এখনো সুদের হার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বাজার বলছে, সেপ্টেম্বরেই হার কমানোর সম্ভাবনা বেশি।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গন
এ সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ন্যাটো নেতাদের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এ সপ্তাহে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে—খাদ্য ও জ্বালানি বাদে মূল্যস্ফীতির হার, বেকার ভাতার আবেদনের পরিসংখ্যান এবং জুন মাসের শিল্প-উৎপাদন সূচক।
বিশ্ব বাজার এখন তাকিয়ে রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনার পরবর্তী ধাপ কী হয় এবং তা বিশ্ব অর্থনীতির উপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলে।