স্টাফ রিপোর্টার, প্রবাস বুলেটিন
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও রাজনীতিতে নারীদের অবস্থানে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসেনি—এমন অভিযোগ করেছেন সেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও অংশগ্রহণকারী নারীরা। সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত ‘জুলাই উইমেন্স ডে’-তে তারা এই হতাশা প্রকাশ করেন।
আয়োজনে গান, স্মৃতিচারণা, তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র ও বিশেষ ড্রোন শোর মাধ্যমে স্মরণ করা হয় ২০২৪ সালের ১৪ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক রাতকে—যে রাতে “তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার” স্লোগানে মুখর হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আর সেখান থেকেই শুরু হয় সরকার পতনের আন্দোলনের নতুন অধ্যায়।
“রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি এখনো প্রতীকী”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নারী সংগঠক, এনসিপি নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, “চব্বিশের আগে যেভাবে রাজনীতিক নারীদের ‘পলিটিক্যাল মেয়ে’ বলে তাচ্ছিল্য করা হতো, এখনো তা-ই করা হচ্ছে। আমাদের ব্যবহার করা হয় ক্যামেরার সামনে, মিছিলে, ব্যানারে—কিন্তু মেধা ও মতামতের মূল্য নেই।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহনাজ বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। কটাক্ষ, গালি কিংবা নেতিবাচক মন্তব্যে থামা যাবে না।”
আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও প্রতিবাদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “আমরা যারা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছি, ধর্ষণের হুমকিও পেয়েছি, তাদের দমানো যাবে না। আমরা এখনো লড়ছি।”
গৃহিণী পারভিন, যিনি জুলাই আন্দোলনে চোখ হারিয়েছেন, কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “এখন আর কেউ ইব্রাহিমের মা বলে ডাকে না, ডাকে কানি বইলা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, “নারীর অবমাননা আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মর্যাদা—এই দুই প্রশ্নে আমরা আবারও বুক চিতিয়ে দাঁড়াবো। আর কোনো দিন এই মাটিতে দ্বিতীয় স্বৈরাচার আসবে না।”
শিল্প, তথ্যচিত্র ও ড্রোন শো
অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত তথ্যচিত্র ‘জুলাই উইমেন’, যেখানে নারী সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়। কণ্ঠশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, পারসা মাহজাবীন, এলিটা করিম ও ব্যান্ড এফ মাইনর পরিবেশন করেন বিপ্লবী গান।
বিশেষ ড্রোন শোতে ফুটিয়ে তোলা হয় সেই ঐতিহাসিক স্লোগান:
-
“তুমি কে, আমি কে—রাজাকার রাজাকার”
-
“কে বলেছে, কে বলেছে—স্বৈরাচার, স্বৈরাচার”
-
“আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”
-
“শেখ হাসিনার পদত্যাগ”
-
“আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”
ড্রোন শোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বিগত ১৬ বছরের গুম, খুন, নিপীড়ন ও বাকস্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের চিত্রও।
আবরার, নাইমা, মাহবুবকে স্মরণ
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘You Failed to Kill Abrar Fahad’ এবং জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো মাহবুব আলম ও শহীদ নাইমা সুলতানাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র।
আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, “এই চলচ্চিত্র ২০১৯ সালেই তৈরি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তৎকালীন সরকারের হুমকির কারণে তা সম্ভব হয়নি।”
বিশিষ্টজনদের উপস্থিতি ও বার্তা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান
-
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
-
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
-
মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান
-
সমাজকর্মী শারমীন এস মুরশিদ
-
কৃষি ও মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
তারা সবাই বর্তমান প্রজন্মের নারীদের নেতৃত্ব ও দৃঢ়তায় আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন।