ঢাকা:
নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ সরিয়ে ফেলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইট থেকে।
আজ বুধবার দুপুরে ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক প্রথম আলোকে জানান, “কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রতীকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইট আপডেট করতে বলা হয়েছিল, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।”
পরিবর্তন এল একদিন পরেই
গত ১৩ জুলাই নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছিলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হলেও এখনই নৌকা প্রতীক বাদ দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে শাপলা প্রতীককেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।” কিন্তু আজ সকালে ইসি’র ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকায় আওয়ামী লীগের নাম থাকলেও তার পাশে প্রতীক হিসেবে নৌকা দেখা যায়নি।
প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরাও
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান। তিনি লেখেন:
“অভিশপ্ত ‘নৌকা’ মার্কাটাকে আপনারা কোন বিবেচনায় আবার শিডিউলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেন? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গণ–অভ্যুত্থানকে আপনারা জাস্ট বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এই মার্কা রাখছেন আপনারা?”
এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।
পটভূমি: পতনের পর নিষেধাজ্ঞা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখে পড়ে। এর প্রায় নয় মাস পর, চলতি বছরের ১২ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ এবং তার সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে ইসি। যদিও তখন ‘নৌকা’ প্রতীকটি ওয়েবসাইটে বহাল ছিল, যা আজ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হলো।
বিশ্লেষণ:
‘নৌকা’ প্রতীক বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেবল একটি দলীয় চিহ্ন নয়—এটি একটি ঐতিহাসিক প্রতীক, যা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বহু জাতীয় নির্বাচনের স্মারক। সেই প্রতীক ইসি’র ওয়েবসাইট থেকে অপসারণ একটি প্রতীকী সিদ্ধান্ত, যা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন।
উল্লেখযোগ্য:
-
প্রতীক সরানোর পেছনে রাজনৈতিক চাপের প্রভাব আছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।
-
এ ঘটনায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন নাগরিক সমাজ।
সূত্র: নির্বাচন কমিশন, প্রথম আলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
ছবি: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট