প্রতিবেদন: প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার
দফায় দফায় আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি সমন্বিত ও সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করেছে, যার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া যেতে পারে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ রোববার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়াসহ বেশিরভাগ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এখন তারা দলীয়ভাবে চূড়ান্ত মতামত জানাবে। আশা করছি, মঙ্গলবারের মধ্যেই আমরা ঐকমত্যের অবস্থান প্রকাশ করতে পারব।”
সংবিধানে সংশোধন ও প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব
কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৫ দিনের মধ্যে অথবা ভাঙার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুস্পষ্ট বিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার বয়স সর্বোচ্চ ৭৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ জন হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হবেন:
-
প্রধানমন্ত্রী
-
বিরোধী দলীয় নেতা
-
স্পিকার
-
ডেপুটি স্পিকার
-
সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি
স্পিকার কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত দল, সংসদীয় দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের কাছ থেকে প্রস্তাবিত নাম আহ্বান করা হবে। এরপর ১২০ ঘণ্টার মধ্যে বাছাই কমিটি প্রস্তাবিত ও নিজস্বভাবে সংগ্রহ করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবে। রাষ্ট্রপতি তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
বিকল্প প্রক্রিয়া ও ব্যালট ভোটিং ব্যবস্থা
যদি বাছাই কমিটি ঐ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে:
-
সরকারি দল/জোট ৩ জন
-
প্রধান বিরোধী দল/জোট ৩ জন
-
তৃতীয় বৃহত্তম দল/জোট ২ জন প্রস্তাব করবে
এই আটজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একাধিক পদ্ধতিতে বাছাই করে চূড়ান্ত ব্যক্তি নির্বাচিত করা হবে। শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য না হলে গোপন ব্যালটে ‘র্যাংক চয়েজ’ পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। মনোনীত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিয়োগ পাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা পদের শূন্যতা এবং উপদেষ্টা পরিষদ
প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে, ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হবে। তিনি অক্ষম হলে তৃতীয় স্থান প্রাপ্ত ব্যক্তি দায়িত্ব নেবেন। উপদেষ্টা পরিষদে কোনো পদ শূন্য হলে নতুন প্রধান উপদেষ্টা সেই পদে নিয়োগ দিতে পারবেন।
নির্বাচনকালীন সরকার ও মেয়াদ
নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। তবে অনিবার্য পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ৩০ দিন মেয়াদ বাড়তে পারে। নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার দিন নির্বাচনকালীন সরকার বিলুপ্ত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
রোববার অনুষ্ঠিত পঞ্চদশ দিনের সংলাপে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনপি, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী নিজ নিজ প্রস্তাব জমা দেয়। সেসব প্রস্তাব পর্যালোচনার ভিত্তিতে কমিশনের সমন্বিত প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়। আলী রিয়াজ জানান, “এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দলগুলোর বেশিরভাগ মতামতের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হয়েছে।”
সংবিধানিক সংস্কার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নির্ধারণে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টাকে বিশ্লেষকরা ‘গণতন্ত্রে ফেরার সম্ভাব্য পথ’ হিসেবে দেখছেন। তবে বাস্তবায়নের জন্য দরকার দলগুলোর লিখিত সম্মতি এবং নিরপেক্ষ প্রয়োগ কাঠামো।