গাজীপুর ও ঢাকা প্রতিনিধি | ২৩ জুলাই ২০২৫
“আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই”—এই কথাটাই ছিল মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা। কিছুক্ষণ পরেই সেই মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেল হাসপাতালের হিমঘরে—দগ্ধ মরদেহ হয়ে।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয় ৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার। সে প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সোমবারের ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৭ জনের, আহত হয়েছেন ৭৮ জনেরও বেশি।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামের স্থানীয় জামে মসজিদের মাঠে সায়মার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া সায়মার মুখ দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সায়মার মা রিনা বেগম ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলছিলেন, “প্রতিদিনই মেয়েকে আমি স্কুলে দিয়ে আসি। কিন্তু গতকাল যাইনি। আমার ভাই তাকে স্কুলে নিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটা বলে গেল, ‘আম্মু, টাটা বাই বাই।’ ভাবিনি এটাই হবে ওর শেষ কথা।”
সায়মার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম গাজীপুর থেকে উত্তরায় এসে পরিবার নিয়ে থাকতেন। পেশায় তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির কর্মী। দুর্ঘটনার দিন বন্ধুদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি মাইলস্টোন স্কুলে ছোটেন। সারা দিন খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধ্যার পর জানতে পারেন মেয়ের মরদেহ সিএমএইচে রয়েছে। রাত দেড়টার দিকে মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছান গ্রামের বাড়িতে।
কান্নায় ভেঙে পড়া বড় ভাই সাব্বির হোসেন বলেন, “তুই আমার কলিজা, তুই আমার জান। প্রতিদিন একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। এখন আমি কাকে নিয়ে স্কুলে যাব? তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি?”
সায়মা আক্তার ছিল শাহ আলম ও রিনা বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে। তার বড় ভাই সাব্বির এই বছর মাইলস্টোন স্কুল থেকেই এসএসসি পাস করেছে। তাদের সংসারজুড়ে ছিল হাসি, স্বপ্ন আর শিক্ষার আশ্বাস—যা এক মুহূর্তেই চূর্ণ হয়ে গেল যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সেই বিভীষিকাময় দুপুরে।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টা ১২ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি FT-7 BGI প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হলে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন, যাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।