📍 রিপোর্ট: প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | তারিখ: ২৩ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে এক করুণ ট্র্যাজেডিতে রূপ নেয়। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে একই পরিবারের তিন শিশু—আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। এরা সবাই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী এবং চাচা-ভাতিজা সম্পর্কের হলেও বয়স ও বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতায় তারা ছিল অটুট একত্রে।
■ একসাথে স্কুলে গিয়েছিল, একসাথে ফিরে এল কফিনে
সোমবার, ২১ জুলাই। প্রতিদিনের মতোই ওইদিন সকালে স্কুলে গিয়েছিল আরিয়ান (১০), বাপ্পি (৯) ও হুমায়ের (৯)। স্কুল শেষে কোচিংয়ের ক্লাসে অংশ নিয়ে ঘরে ফেরার কথা থাকলেও, তাদের ফেরা হয়েছিল চিরবিদায়ের রূপে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। আরিয়ান ও বাপ্পি পরে মৃত্যুবরণ করে। হুমায়ের ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।
■ তাদের ঘুম এখন পাশাপাশি কবরেই
উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদের পাশেই তিন শিশু থাকতো পরিবারের সঙ্গে। তারা চাচা-ভাতিজা হলেও একে অন্যের বন্ধু ও সহপাঠী ছিল। দুর্ঘটনার পর এলাকার মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে পাশাপাশি শায়িত করা হয় তাদের।
দুই দিন আগেও যেখানে তারা খেলত, হাসত, দৌড়াত, সেই জায়গাটিই এখন স্তব্ধ শোকাবহ পরিবেশে পরিণত হয়েছে।
■ বাবা শাহিনের কান্না থামছে না
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পির বাবা আবু শাহিন ভেঙে পড়েছেন। চোখের জলে সন্তানকে বিদায় জানিয়ে বলেন,
“যেখানে আমার ছেলে ক্লাস করছিল, তার আগের ক্লাসরুমে বিমানটি ঢুকেছে। আমি জানতাম, সে আর নেই।”
বাবা হিসেবে সন্তানকে নিজ চোখে এমন মৃত্যুতে বিদায় জানাতে হবে, এমন দুর্বিষহ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
■ বেঁচে গিয়েও দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে আফনান
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান আফনান সেদিন ক্লাসে ছিল না বলেই বেঁচে যায়। দুর্ঘটনার সময় সে লাইব্রেরিতে ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে দৌড়ে আসে স্কুল প্রাঙ্গণে।
“বন্ধুদের জানাজায় এসেছি। তারা ছিল আমার ক্লাসমেট, বন্ধু। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না,” — জানায় আফনান।
■ এলাকাবাসীর চোখে জল, বুকে শূন্যতা
তারারটেক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন,
“মাত্র একদিন আগেও যাদের একসঙ্গে খেলতে দেখেছি, তারা আজ কবরে শুয়ে আছে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আরও দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। তাদের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। উত্তরার বাসিন্দাদের জন্য এটি যেন এক অভিশপ্ত দিন হয়ে রইল।