ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০২৫
— রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা ও শোকের মিছিল। দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে একই পরিবারের দুই সন্তান—তাবাসসুম নাজিয়ার (১৩) মৃত্যুর একদিন পর তার ছোট ভাই আরিয়ান আশরাফ নাফিও (৯) না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন।
বুধবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউ-১০ নম্বর ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু নাফি। ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। “এত বড় ফ্লেম বার্ন থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। শুরু থেকেই তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি,” বলেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার ভোর রাত ৩টায় একই হাসপাতালে মারা যায় তার বড় বোন তাবাসসুম নাজিয়া, যার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় দুই ভাইবোনই মাইলস্টোন কলেজ ভবনের ভেতরে ক্লাসে উপস্থিত ছিল।
তাবাসসুম মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি এবং নাফি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তাদের পরিবার রাজধানীর উত্তরা কামারপাড়া এলাকায় বসবাস করত। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল তারা।
নিহত শিশুদের মামা মো. ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, “আমাদের পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমার বোন ও দুলাভাই কিছু বলার অবস্থায় নেই। সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।”
নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। সন্তানদের উন্নত শিক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি পরিবার নিয়ে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রাম থেকে রাজধানীতে চলে আসেন। এখন সেই স্বপ্নই কাল হয়ে দাঁড়াল।
দুই ভাইবোনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে ঢাকার কামারপাড়া এলাকায়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই (FT-7 BGI) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ বহু মানুষ আহত হন। এ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৬৫ জনের বেশি, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।