টাঙ্গাইল ও ঢাকা প্রতিনিধি | ২৩ জুলাই ২০২৫
বাবাকে প্রতিদিন কপালে চুমু দিয়ে স্কুলে যেত ৯ বছরের মেহেনাজ আফরি হুমায়রা। সেই শিশুটি আর কোনোদিন বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে না। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছে তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়ায় নিজ গ্রামে ফেরত এলে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য—কফিনে শায়িত মেয়েকে শেষবারের মতো চুমু খাচ্ছেন তার বাবা দেলোয়ার হোসাইন, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা সুমি আক্তার। মেহেনাজের মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, “মেহেনাজের স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম—তোমার মা এসে নিয়ে যাবে। আমার স্ত্রী ক্লাসরুমের কাছাকাছি ছিল, আর ওর সামনে দিয়েই বিমানটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ে। সব কিছু তার চোখের সামনে ঘটে।”
তিনি বলেন, “আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই—এই ঢাকা শহরের মধ্যে, যেখানে লাখ লাখ মানুষের বসবাস, সেখানে কেনো যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ?”
পরিবার জানায়, সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনার পর মেহেনাজের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)–এ গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন বাবা। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ পৌঁছে গ্রামের বাড়ি। রাতজুড়ে কান্না, আহাজারি আর শোক ভারী করে তোলে পুরো এলাকা।
মেহেনাজের দাদা আবদুল বাছেদ বলছিলেন, “আমার দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না।” তার আর্তনাদে গ্রামের মানুষও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
আজ সকাল ৯টায় হতেয়া গাবলের বাজারে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মেহেনাজকে।
মেহেনাজ ছিল দেলোয়ার হোসাইন ও সুমি আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান। দেলোয়ার হোসাইন গত ১৫ বছর ধরে মাইলস্টোন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। সন্তানকে নিজের কর্মস্থলেই ভর্তি করিয়েছিলেন যেন নিরাপদে ও সুশিক্ষায় বেড়ে ওঠে—সেই জায়গাতেই মৃত্যু হয়েছে তার।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই সোমবার দুপুর ১টা ১২ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি FT-7 BGI যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এখন পর্যন্ত ৩০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৬৫ জনের বেশি মানুষ। এদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।