ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০২৫
— রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হলেন ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক মাসুকা বেগম (৩৭)। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর আগে পাশের বেডে চিকিৎসাধীন আরেক সহকর্মীর কাছে নিজের শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি—মৃত্যুর পর যেন তাঁকে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোহাগপুরে দাফন করা হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি FT-7 BGI যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় মাসুকা বেগম ক্লাস নিচ্ছিলেন। দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের সময় মাসুকা বেগমের খালাতো ভাই মনির হোসেন বলেন, “তিনি মৃত্যুর আগে পাশের বেডে থাকা আরেক শিক্ষককে বলেন, যদি মারা যাই, আমাকে আমাদের গ্রামের বাড়ি সোহাগপুরে কবর দিও। সেই অনুযায়ী মরদেহ সেখানেই নেওয়া হচ্ছে।”
সকাল পৌনে ১০টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের ফটকে কিছু সময়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্স থামানো হয় মরদেহ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। অ্যাম্বুলেন্সে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন মাসুকা বেগমের বড় বোন পাপড়ি রহমান। পরিবারের অন্য সদস্যদের আহাজারিতেও ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে গোসল করানো হবে, এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে নেওয়া হবে, জানিয়ে মনির হোসেন বলেন, “আমরা মাসুকার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই তাকে তার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নিচ্ছি।”
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে গেছেন।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৬৫ জনেরও বেশি। এই ঘটনাকে ঘিরে পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।