ব্যাংকক/নমপেন, ২৪ জুলাই ২০২৫:
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় তীব্র সামরিক সংঘাত চলছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া দুই সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।
সংঘাতের কেন্দ্রস্থল উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার অদ্দার মিনচেই প্রদেশের কাছাকাছি তা মোয়ান থম মন্দির সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা। থাই সেনাবাহিনীর দাবি, কম্বোডীয় সেনারা প্রথমে গুলি চালায়, এরপর থেকে টানা লড়াই চলছে।
চরম উত্তেজনা, বিপুল জনগণ নিরাপদে সরানো হয়েছে
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের জেলা প্রশাসক সুত্তিরোত চারোয়নথানাসাক জানিয়েছেন, কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে আরও দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রাম থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কম্বোডিয়া সীমান্তে কামান, বিএম-২১ রকেটসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে থাই সেনাবাহিনী। পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ডও সীমান্তে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতির পথে
সর্বশেষ পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড সরকার কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে এনেছে এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে থাইল্যান্ড থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এরইমধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর অবনমিত হয়েছে।
জবাবে, কম্বোডিয়া সরকার নিজেদের সব কূটনীতিক থাইল্যান্ড থেকে প্রত্যাহার করে থাই কূটনীতিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য নমপেন পোস্ট’ জানিয়েছে, দেশটির সরকার থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সেকেন্ড সেক্রেটারি পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
পারস্পরিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, থাইল্যান্ডই প্রথম হামলা চালিয়েছে, এবং আত্মরক্ষার্থে কম্বোডীয় বাহিনী জবাব দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “পাল্টা লড়াই ছাড়া আমাদের সেনাবাহিনীর আর কোনো উপায় নেই।”
হুন সেন সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী মজুত না করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সীমান্ত ছাড়া অন্য অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে জীবন-ব্যবসা চলমান রাখার অনুরোধ করেছেন।
মাইন বিস্ফোরণ ও অতীত সংঘর্ষ
বুধবার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে একজন থাই সেনা গুরুতর আহত হন ও তার একটি পা হারান। এর আগে ১৬ জুলাই একই এলাকায় আরও তিন থাই সেনা মাইন বিস্ফোরণে আহত হন।
থাইল্যান্ড এ ঘটনার জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করলেও, কম্বোডিয়া দাবি করেছে যে থাই সেনারা পুরনো যুদ্ধকালে পোঁতা মাইনের বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন, যা নির্ধারিত সীমান্ত পথের বাইরে গিয়েই ঘটেছে।
বাণিজ্য সম্পর্কেও প্রভাব
পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে কম্বোডিয়ার বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। দেশটি থাইল্যান্ড থেকে জ্বালানি, গ্যাস, ফলমূল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের পুনরুত্থান
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বিভিন্ন অংশ বহুদিন ধরেই অচিহ্নিত ও বিরোধপূর্ণ। গত মে মাসেও এক সামরিক সংঘাতে একজন কম্বোডীয় সেনার মৃত্যু হয়। এই দীর্ঘদিনের ভূখণ্ডগত বিরোধ আবারও সহিংসতা ও কূটনৈতিক টানাপড়েনে রূপ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সরকারি বিবৃতি, দ্য নমপেন পোস্ট, রয়টার্স।