প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ২৪ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস তৈরি পোশাকশিল্প আজ চরম সংকটে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক মন্দা ও সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্কের প্রেক্ষিতে এ খাত পড়েছে গভীর অনিশ্চয়তায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কার্যক্রমের বড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক চাপ
জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, শ্রমিক অসন্তোষ ও বিদেশি ক্রেতাদের অনাস্থা পোশাক খাতকে দুর্বল করে তোলে।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জুলাইয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি পত্রে জানান, নতুন বাণিজ্য চুক্তি না হলে আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকপণ্যের ওপর ৩৫% অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজেএমইএ’র শঙ্কা
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজেএমইএ) জানিয়েছে, বাড়তি শুল্কের কারণে রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেসব কারখানা, যাদের রপ্তানির বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর।
পোশাক খাতের দুরবস্থা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজেএমইএর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কারোপ আমাদের খাতকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা ও বাণিজ্য সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ইইউ বাজারেও পড়তে পারে প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সংকুচিত হলে এর প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড একসঙ্গে একাধিক বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে ‘ঝুঁকি বণ্টন নীতি’ অনুসরণ করে থাকে। ফলে এক বাজারে সংকট তৈরি হলে অন্যান্য বাজারেও তারা সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।
ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রত্যাশা
বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী মহল মনে করছে, বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও কূটনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তাই তিনি চাইলে বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
একাধিক সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তাঁর প্রতি এমন একটি আহ্বানও জানানো হয়েছে, যেন তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রপ্তানি স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় হন।
উপসংহার: দেশের স্বার্থে ঐক্য প্রয়োজন
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিভাজন নয়, দেশের স্বার্থে সম্মিলিত কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণই এখন সময়ের দাবি। একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার দরকার, অন্যদিকে দেশের ভেতরে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা ও উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখাও জরুরি।
কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, ‘কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।’ এখনই সময় সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করার।