উভয়পক্ষে শতাধিক আহত, লাখের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২৬ জুলাই ২০২৫
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার (২৬ জুলাই) নতুন করে আরও ১২ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে কম্বোডিয়া। এর মধ্যে সাতজন বেসামরিক নাগরিক এবং পাঁচজন সেনাসদস্য। এর ফলে গত তিন দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে উভয়পক্ষে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৩০ জন।
কম্বোডিয়ার দাবি: বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে থাই বাহিনী
কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যালি সোচেয়েতা সাংবাদিকদের জানান, থাইল্যান্ডের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ২০ জনের বেশি সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার একটি বৌদ্ধমন্দিরে আশ্রয় নেওয়া এক বেসামরিক ব্যক্তিকে রকেট হামলায় হত্যা করা হয় বলে জানান তিনি। হামলার জন্য তিনি থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন।
থাইল্যান্ডের পাল্টা তথ্য: শিশুসহ বেসামরিক নিহত
থাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার হামলায় দেশটির অন্তত ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক (যার মধ্যে শিশু রয়েছে) এবং ৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।
থাই কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, তাদের ২৯ জন বেসামরিক ও ৩০ জন সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।
যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে সংঘাত
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সংঘাতে উভয়পক্ষ যুদ্ধবিমান, কামান, ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সীমান্ত সংঘাত থেকে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়, উচ্ছেদ চলছে
কম্বোডিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রেয়াহ বিহার প্রদেশ থেকে ইতোমধ্যে ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী আট জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়েছে এবং ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে ৩০০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
শান্তির আহ্বান ও কূটনৈতিক উদ্যোগ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল (২৫ জুলাই) এই সংঘাত নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে কম্বোডিয়ার জাতিসংঘ দূত চেয়া কেও বলেন,
“কম্বোডিয়া অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। আমরা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।”
এদিকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরন্দেজ বালানকুরা বলেন,
“কম্বোডিয়া যদি কূটনৈতিক, দ্বিপক্ষীয় বা মালয়েশিয়ার মাধ্যমে আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে থাইল্যান্ডও প্রস্তুত।”
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্ত বিরোধ নতুন নয়। ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক জটিলতা ঘিরে উভয় দেশ একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে। তবে এবারকার সংঘর্ষ প্রতিবেশী সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে বলে সতর্ক করছেন পর্যবেক্ষকরা।