জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৩ আগস্ট বৃহৎ জমায়েতের ঘোষণা
সিলেট | ২৫ জুলাই ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আজ আমাদের কাঁধে। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি।”
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে এনসিপির আয়োজনে একটি পদযাত্রা সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
নাহিদ ইসলাম জানান, আগামী ৩ আগস্ট সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি বৃহৎ গণজমায়েতের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, “ইনশা আল্লাহ, শহীদ মিনার থেকেই আমরা দাবি আদায় করব।”
সিলেটের প্রতি ঐতিহাসিক অবহেলার অভিযোগ
নাহিদ বলেন, “সিলেট শুধুই একটি অঞ্চল নয়—এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংগ্রামের কেন্দ্রভূমি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও সিলেট বুক চিতিয়ে লড়েছে। অথচ ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত সিলেটকে নিয়মিত অবহেলা করা হয়েছে—হোক তা পাকিস্তান সরকার কিংবা আজকের আওয়ামী লীগ সরকার।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “১৯৪৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গণভোটে সিলেট পূর্ববঙ্গের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও করিমগঞ্জসহ কিছু এলাকা আসামে রেখে দেওয়া হয়। গ্যাস, বালু, পাথরসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার হয়েও সিলেটবাসী বঞ্চিত।”
‘শহীদদের রক্তের শপথে এগিয়ে যাচ্ছি’
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেট সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই অঞ্চলে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন, সাংবাদিক এ টি এম তুরাবসহ ১৭ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা তাঁদের উত্তরসূরি, আমরা তাদের রক্তের শপথ নিয়েই এসেছি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।”
প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণের দাবি
প্রবাসী সিলেটিদের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “লন্ডনের সড়কে সিলেটিদের রক্ত-ঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে। আমরা চাই—প্রবাসীরা, বিশেষ করে প্রবাসী সিলেটিরা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখুক। তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এনসিপি কাজ করছে।”
সিলেটকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা
সিলেটকে কেন্দ্র করে এনসিপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিলেট একটি খনিজ সম্পদের অভয়ারণ্য। আমাদের লক্ষ্য—সিলেটকে একটি আধুনিক শিল্পোন্নত শহরে রূপান্তর করা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উন্নয়নে এনসিপি দৃঢ়ভাবে কাজ করবে।”
সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি
এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, “সিলেট একটি বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির প্রতীক। এখানকার ভাষা, সংস্কৃতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী ও আলেম সমাজ—সবার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা হবে। সিলেটি ভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি আমরা জোরালোভাবে তুলবো।”