ঢাকা, জুলাই ২৮
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকার মোট ৪০৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। যা এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে ৩৪ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে আসল বাবদ ২৫৯ কোটি ডলার এবং সুদ বাবদ ১৪৯ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে।
ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে ঋণ ছাড়
ইআরডির হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একইভাবে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতিও কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৮ কোটি ডলারে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৭৯২ কোটি ডলার।
বিদেশি ঋণ প্রদানে শীর্ষে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিদায়ী বছরে সংস্থাটি এককভাবে ২৫২ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান। তবে ভারত, চীন ও রাশিয়া এ বছরে নতুন কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
এক দশকে চারগুণ ঋণ পরিশোধ
ইআরডির তথ্যমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছিল ১১০ কোটি ডলার। এক দশকের ব্যবধানে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৯ কোটি ডলারে, অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ প্রায় চার গুণ বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ ছিল ২০১ কোটি ডলার, আর ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ছুঁয়েছিল।
মেগা প্রকল্পের কিস্তি শুরু, চাপ আরও বাড়বে
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় মেগা প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ঋণের কিস্তি পরিশোধ। জাপানের কাছ থেকে নেওয়া এই ঋণ শোধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে।
এছাড়া কর্ণফুলী টানেল এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকলে রাজস্ব খাতে ব্যয় সংকোচন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটতে পারে। পাশাপাশি ঋণপ্রাপ্তির হার কমে যাওয়াও উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সামাল দিতে কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা জরুরি বলে মত দেন অর্থনীতিবিদরা।