সৌদি আরব সরকার দেশটির শ্রমবাজারে নিজস্ব নাগরিকদের প্রাধান্য দিতে ‘সৌদিকরণ’ (Saudization) নীতি জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে তিনটি প্রধান পেশাগত খাতে—ফার্মেসি, দন্তচিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত প্রকৌশলে—ধাপে ধাপে প্রবাসীদের নিয়োগ কমিয়ে নিজস্ব নাগরিকদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রোববার (২৭ জুলাই) থেকে নতুন এ উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক সৌদি গেজেট।
ফার্মেসি খাতে নতুন নির্দেশনা
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ফার্মেসি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি নাগরিকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
-
কমিউনিটি ফার্মেসি ও মেডিকেল কমপ্লেক্সে: জনবলের ৩৫ শতাংশ হতে হবে সৌদি নাগরিক।
-
হাসপাতালের ফার্মেসি: এই হার ৬৫ শতাংশ।
-
অন্যান্য ফার্মেসি কার্যক্রম: কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ।
এই নীতি কার্যকর হবে শুধুমাত্র সেই ফার্মেসিগুলোর ক্ষেত্রে যেখানে পাঁচজন বা তার বেশি কর্মী রয়েছেন। সৌদি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার সৌদি রিয়াল।
দন্তচিকিৎসায় সৌদি নিয়োগ বাধ্যতামূলক
দন্তচিকিৎসা খাতে ৪৫ শতাংশ পদে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদের বেতন সর্বনিম্ন ৯ হাজার রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রযুক্তি প্রকৌশলে স্থানীয়করণ
প্রযুক্তিনির্ভর প্রকৌশল খাতেও পাঁচ বা ততোধিক কর্মী নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩০ শতাংশ পদে সৌদি নাগরিকদের রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারিত হয়েছে ৫ হাজার রিয়াল।
সরকারের ব্যাখ্যা
সৌদি সরকার বলছে, এই নীতির লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় নাগরিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়ন। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রবাসী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জনবলকেই মূলধারায় আনা হচ্ছে।
প্রবাসীদের জন্য নতুন বাস্তবতা
এই সিদ্ধান্তের ফলে সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসী বিশেষ করে ফার্মাসিস্ট, দন্তচিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের জন্য কর্মসংস্থানে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হলো। নীতির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিবাসী কর্মীদের ওপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে সৌদি আরবে ভবিষ্যতে প্রবাসী পেশাজীবীদের সুযোগ আরও সীমিত হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের কর্মবাজারে নতুন কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন হবে কর্মী পাঠানো দেশগুলোর।