📍 প্রবাস বুলেটিন
📅 ৩০ জুলাই ২০২৫ | ঢাকা
রাজধানীর নাখালপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক দলিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযানে একটি দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক, অন্তত ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি, এবং ৬০-৭০ লাখ টাকার ব্যাংক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ-সমর্থিত সূত্র।
চেক উদ্ধার ও ব্যাংক লেনদেন
গতকাল (২৯ জুলাই) রাত ১১টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে রিয়াদের ঘর থেকে উদ্ধার করা চেকটি আগামী মাসের ২ তারিখে ক্যাশ হওয়ার কথা ছিল। চেকটি ছিল ৫ কোটি টাকার জমি উদ্ধারের একটি চুক্তির অংশ, যার মধ্যে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার অগ্রিম চেক রিয়াদ নিজ ঘরে রেখেছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিযানে ১০টি এফডিআরের কাগজও উদ্ধার হয়, যেগুলোর প্রতিটিতে অন্তত দুই লাখ টাকা করে জমা রাখা ছিল। একটি বেসরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত কয়েক মাসে ৬০-৭০ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্যও পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।
সাংবাদিক নির্ঝরের ফেসবুক পোস্টে তথ্য ফাঁস
এই অভিযানের তথ্য প্রথম সামনে আসে প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের ফেসবুক পোস্টে। তিনি জানান, রিয়াদের বাসা থেকে চেক, এফডিআর এবং ব্যাংক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। পোস্টে তিনি রিয়াদকে “চাঁদাবাজ” আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, “সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন রিয়াদ।” তবে এখনো পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
মামলার প্রেক্ষাপট ও গ্রেপ্তার
এর আগে ২৬ জুলাই গুলশান-২ নম্বর এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা দাবির ঘটনায় রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলায় বলা হয়, রিয়াদ ও তার সহযোগীরা শাম্মী আহমেদের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। প্রথম ধাপে তিনি ১০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন।
এজাহারে আরও বলা হয়, টাকা না দিলে “আওয়ামী লীগের দোসর” আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে এবং পরবর্তীতে বাসার সামনে এসে বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিয়াদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে, অন্য একজন পালিয়ে যান।
রিমান্ড ও সাংগঠনিক বহিষ্কার
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজন— আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও ইব্রাহিম হোসেন— বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছেন। অপর গ্রেপ্তারকৃত একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের পক্ষ থেকে রিয়াদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নীতিবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এই বহিষ্কার অনুমোদন করে সকল সদস্যকে তাদের সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, আর্থিক দুর্নীতি এবং দমনমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এমন সংগঠনের কার্যক্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। পাশাপাশি, চেক, এফডিআর ও ব্যাংক লেনদেনের এমন বিশাল অঙ্কের অর্থের উৎস এবং ব্যয় কোথায়—তা নিয়ে তদন্তে আরও বিস্তার আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।