স্টকহোম/ওয়াশিংটন, ৩০ জুলাই ২০২৫ —
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ৯০ দিনের শুল্কবিরতি আরও বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্যে পৌঁছেছে উভয় পক্ষ। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে দুই দিনব্যাপী গঠনমূলক আলোচনা শেষে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন দুই দেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ
এই শুল্কবিরতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১২ আগস্ট। যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি, তবে উভয় পক্ষই স্পষ্ট করেছে যে তারা বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে সংলাপ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট আলোচনার শেষে বলেন, “বৈঠক অত্যন্ত গঠনমূলক হয়েছে। শুধু চূড়ান্ত অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি।” তিনি আরও জানান, শুল্কবিরতির মেয়াদ বাড়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আপত্তি জানাবেন—এমন কোনো ইঙ্গিত আপাতত নেই।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে
স্টকহোম বৈঠকের পর বেসেন্ট সাংবাদিকদের জানান, তিনি আজ বুধবার ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিষয়টি অবহিত করবেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁর কাছ থেকেই আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার জানান, শুল্কবিরতির সময়সীমা আরও ৯০ দিন বাড়ানো হতে পারে, যা সংকট এড়ানোর একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গ্রিয়ার বলেন, “আমাদের অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে এবং ইতিবাচক প্রতিবেদন নিয়ে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। তবে শুল্কবিরতির সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই নেবেন।”
চীনের সঙ্গে আলোচনা এখনো ‘জটিল’
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, চীনের সঙ্গে আলোচনা তুলনামূলকভাবে আরও জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠেছে। এর পেছনে রয়েছে চীনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বিরল খনিজসম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ।
চলতি বছরের মে মাসে উভয় দেশ তিন অঙ্কের হারে (১০০% বা তার বেশি) শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে, যার ফলে বর্তমান শুল্কবিরতির সূচনা হয়। তবে যদি কোনো কার্যকর চুক্তি না হয়, তবে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে বিপর্যয় এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা আবারও দেখা দিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্ববাজারের নজর ওয়াশিংটনের দিকে
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাজারের নজর রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের দিকে। বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নয়, বরং সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সমাধান না হলে শুধু বাণিজ্যিক খাত নয়, শিল্পোৎপাদন, রপ্তানি ও বৈশ্বিক কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।