📍 প্রবাস বুলেটিন
📅 ৩০ জুলাই ২০২৫ | ঢাকা
সংস্কার ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর খসড়া নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল কনসেন্সাস পার্টি (এনসিপি)। খসড়াটি বিএনপি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করলেও জামায়াত একে ‘অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক’ এবং এনসিপি ‘আইনি ভিত্তিহীন’ বলে মন্তব্য করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২১তম দিনের সংলাপে দলগুলোর এমন অবস্থান স্পষ্ট হয়। সনদের খসড়ায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব, সংলাপের রূপরেখা এবং সাত দফা অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আগামী দুই বছরে সংবিধান ও আইন-বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি: “সনদ ইতিবাচক, তবে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক নির্ধারণের প্রস্তাব”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সনদের অঙ্গীকার অংশে আমরা একমত। কিছু ভাষাগত সংশোধনী থাকলে তা প্রস্তাব করব। দুই বছরের বাস্তবায়ন সময়সীমাও আমরা সমর্থন করি।”
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বাছাই কমিটি ব্যর্থ হলে পরবর্তী সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার পক্ষে বিএনপি। তারা চায়, প্রয়োজনে সাবেক প্রধান বিচারপতির মধ্য থেকে উপদেষ্টা নির্বাচন হোক, কিন্তু রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার যেন না থাকে।
জামায়াত: “গণভোট ছাড়া বৈধতা নেই”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক। এতে আইনি কাঠামো নেই। বাস্তবায়নে গণভোট কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে জনমত নিতে হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা বাছাই কমিটিতে বিচারপতি অন্তর্ভুক্তির পক্ষে দলটি। তারা বলছে, এতে তৃতীয় শক্তির প্রভাব কমবে এবং নিরপেক্ষতা বাড়বে।
এনসিপি: “আইনি ভিত্তি ছাড়া সই নয়”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন সাফ জানিয়ে দেন, মৌলিক সংস্কারগুলো খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত না হলে, এবং আইনি কাঠামোর নিশ্চয়তা না থাকলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।
তারা বলেন, “সংলাপে ছয়টি বাস্তবায়নপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।”
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে জটিলতা অব্যাহত
বাছাই কমিটি গঠনের নতুন প্রস্তাবে পাঁচজন সদস্য—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন—৪-১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় উপদেষ্টা নির্বাচনের ক্ষমতা পাবেন।
এতে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, বর্তমান প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মাধ্যমে মনোনীত দুই বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে।
বিএনপি এই প্রস্তাবে একমত নয়। তারা বলে, বাছাই কমিটি ব্যর্থ হলে সংসদে আলোচনা হওয়াই যুক্তিযুক্ত। তবে জামায়াত বলছে, ৩০টি দলের সংলাপে মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াই যথেষ্ট।
নারী প্রতিনিধিত্বে ভিন্নমত
নারীদের জন্য সংসদে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসন সংরক্ষণের বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াত একমত হতে পারেনি। কমিশন অন্তত ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব দিলেও বিএনপি বলেছে, এবারের নির্বাচনে ৫ শতাংশ, পরবর্তী নির্বাচনে ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। জামায়াতসহ ছয়টি ধর্মভিত্তিক দল এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে।
অন্যান্য বিরোধ ও প্রত্যাশা
-
বিএনপি সিএজি, ন্যায়পাল, পিএসসি ও দুদক নিয়োগে সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে, বরং আইনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার পক্ষে।
-
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ের ঐকমত্যের বিষয়গুলো বুধবার পাঠানো হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত সনদ প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেষ কথা
জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে একটি কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত ও শর্তাদি স্পষ্ট করছে, বাস্তবায়নের পথে ঐকমত্য এখনো দূরবর্তী। আসন্ন দিনগুলোয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে—বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে: আইনভিত্তিক সংস্কারের পথে, নাকি মতানৈক্যের অচলাবস্থায়।