ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০২৫ —
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী আর্থসামাজিক অবস্থা ও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে এক আবেগঘন ও বিশ্লেষণধর্মী অভিমত দিয়েছেন প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে কীভাবে এক সময়ের অনগ্রসর দেশটি ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়েছে।
তিনি স্মৃতিচারণ করে জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পরিবার দেশের ভেতরেই ছিল। সে সময় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্র ছিল অত্যন্ত সংকটময়। চরম দারিদ্র্য, সীমিত আয়, এবং খুবই স্বল্প চাহিদা ছিল গ্রামীণ জনপদের বাস্তবতা। এক টাকায় সপ্তাহের বাজার—চাউল, তরকারি, সরিষার তেল ও কেরোসিন তেল কেনার দিনগুলো ছিল বাস্তবতা।
তাঁর ভাষায়, “গ্রামে এমন পরিবার ছিল না যারা এক সের সরিষার তেল বা কেরোসিন কিনতে পারত। মানুষ আধা পোয়া সাবান কিনে দিনের পর দিন চলত।”
এই অতীতের বিপরীতে তিনি বর্তমান বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা, জীবনযাত্রার মান এবং বাজারচাহিদার বড় পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চিত্র
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৯৭%, যা আগের বছরের ৪.২২% এবং তার আগের বছরের ৫.৭৮% এর চেয়ে কম।
মূল্যস্ফীতি ছিল তুলনামূলক বেশি—২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০.১৮%। আগের বছর এটি ছিল ৯.৭৩%, তার আগের বছর ৯.০২% এবং ২০২১-২২ সালে ছিল ৬.১৫%।
রিজার্ভ ও বৈদেশিক আয়ের ইতিবাচক ধারা
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২৫ সালের জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩০.৫১ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের ২৬.৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে আমদানি ব্যয় হ্রাস ও বৈদেশিক ঋণ প্রবাহের প্রভাব।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি দেখা গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০৩৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের ২,৩৯১ কোটি ডলারের চেয়ে প্রায় ২৬.৮% বেশি।
পণ্য রপ্তানি থেকেও উল্লেখযোগ্য আয় হয়েছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪,৪৯৫ কোটি ডলার। তবে আগের কয়েক অর্থবছরের তুলনায় তা কিছুটা কম।
রাজস্ব ঘাটতি ও আয়
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সামান্য ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩,৬০,৯২২ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা ছিল ৩,৮২,৬৭৮ কোটি এবং ২০২২-২৩ সালে ছিল ৩,৮৮,০০১ কোটি টাকা।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু গড় আয় ছিল ২,৭৮৪ ডলার, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২,৮২০ ডলার।
সমাপনী মন্তব্য
সাবেক অধ্যক্ষ বলেন, “আজকের প্রজন্ম হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না কীভাবে এক টাকায় একটি পরিবার দিনের বাজার করতে পারত। কিন্তু সেই ‘অসাধ্য’ কাজটিও একদিন সম্ভব ছিল। আজকের উন্নত অর্থনৈতিক কাঠামোর পেছনে রয়েছে সেদিনের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ।”
তিনি জেনারেশন জেড-এর উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা যাদের ‘বুড়ো’ বলে ঠাট্টা করো, তাঁরাই তো এই দেশের ভিত গড়েছেন। তাদের পরিশ্রমেই আজ তোমরা এই আধুনিক বাংলাদেশে বেঁচে আছো।”