প্রকাশকাল: বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫
প্রতিবেদক: প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক দখল পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজা দখলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। ইসরায়েল চাইলে পুরো গাজা দখলে নিতে পারে—এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি তাদের নিজস্ব বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্পের মন্তব্য:
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন,
“আমি এখন গাজার মানুষদের খাবার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। বাকি সিদ্ধান্তগুলো ইসরায়েলই নেবে।”
পটভূমি:
এই মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছেন। এরই মধ্যে গাজার বিস্তীর্ণ অংশ চলে গেছে ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৮৬ শতাংশ অঞ্চল এখন ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন।
মানবিক সংকট চরমে:
-
গাজায় বসবাসকারী লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
-
বোমাবর্ষণ ও খাদ্য ঘাটতির কারণে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।
-
ইসরায়েল মার্চ থেকে প্রায় সব ধরনের ত্রাণ সহায়তা আটকে রেখেছে।
-
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত অল্প কয়েকটি মানবিক কেন্দ্রই গাজার জনগণের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা।
জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি:
জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,
“গাজা পুরোপুরি দখল করার প্রচেষ্টা একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গাজা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ:
গাজার কিছু অংশে এখনো হামাসসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের হাতে ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে। পুরো গাজা দখল হলে এদের জীবন হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্পের অতীত মন্তব্য:
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া আরেকটি বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছিলেন,
“গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা গড়ে তোলা যেতে পারে।”
অনেকেই এই মন্তব্যকে জাতিগত নির্মূলের প্রকাশ্য সমর্থন বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখযোগ্য প্রেক্ষাপট:
-
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলেও এখনো আকাশসীমা, সীমান্ত ও জলসীমার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতেই।
-
ফলে বাস্তবিক অর্থে গাজা এখনো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবেই বিবেচিত হয় বলে জানান আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা।
-
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো গাজায় পুনরায় সেনা মোতায়েন ও বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে।
শেষ কথা:
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের অবস্থান ফিলিস্তিনিদের অধিকার আরও সংকুচিত করবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সূত্র: আলজাজিরা