🔹 প্রকাশকাল: বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫
দেশের নদ-নদী ও বিশাল সমুদ্রসম্পদকে কেন্দ্র করে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উত্তরণে এই বিকল্প রূপরেখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান।
মূল বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:
-
নতুন অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি:
“দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে আমাদের মৌলিক চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। নদী ও সমুদ্র আমাদের অমূল্য সম্পদ—এগুলোকে সমান্তরালভাবে কাজে লাগিয়ে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা। -
সমুদ্রভাগের গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত:
তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, বঙ্গোপসাগরের একটি বড় অংশ আমাদের দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর আয়তন আমাদের স্থলভাগের তুলনায় বেশি হলেও আমরা সেটিকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় যথাযথ গুরুত্ব দিই না।” -
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনা:
“এই অংশের পানির ওপর দিয়ে দেশ-বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা সারা পৃথিবীকে আমাদের প্রতিবেশী বানাতে পারি,” বলেন তিনি। -
চট্টগ্রাম বন্দরের রূপান্তর:
চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “নৌবাহিনী পরিচালিত ড্রাই ডক লিমিটেডের অধীনে নিউ মুরিং টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে। মাত্র দুই সপ্তাহে গড়ে দৈনিক ২২৫টি অতিরিক্ত কনটেইনার পরিচালিত হচ্ছে।” -
উপকূলীয় অঞ্চলে শিল্প সম্ভাবনা:
কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকাকে অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন ইউনূস। তিনি বলেন, “শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য ও দক্ষ ব্যবহারের কারণে এই অঞ্চলে নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে।” -
অন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিক:
উপদেষ্টা জানান, সমুদ্র ও উপকূলীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারে ইতোমধ্যে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং তারা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিচ্ছেন। -
বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা:
“গভীর সমুদ্রকে এখনো আমরা আমাদের কল্যাণে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে কাজ শুরু হয়েছে—যা লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে,” বলেন তিনি।
উপসংহার:
অধ্যাপক ইউনূসের পানিভিত্তিক অর্থনীতির রূপরেখা শুধু দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নয়, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূমিকাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। তার এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে উন্নয়ন পরিকল্পনায় পানিসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের অগ্রাধিকার পাওয়া এখন সময়ের দাবি।