আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সমরাস্ত্র নয়, বরং বাণিজ্য দিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্কনীতি ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাকে তিনি এখন ব্যবহার করছেন ভূরাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে। এর ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতির আদর্শ ব্যবস্থা নিজ দেশেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যযুদ্ধ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ—সব মিলিয়ে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যনীতি কার্যত একধরনের কূটনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। তবে এই কৌশল উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অভূতপূর্ব মাত্রায় বেড়েছে। একইসঙ্গে ভারতও রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে এবং চীনের সঙ্গে ব্রিকস জোটে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় রাশিয়া-ভারত-চীনের মধ্যে কৌশলগত সমঝোতা আরও জোরদার হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপই এই ঘনিষ্ঠতার অন্যতম অনুঘটক।
বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন ধারা
স্নায়ুযুদ্ধের সময় প্রতিযোগিতা ছিল মূলত সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতার ওপর। কিন্তু ২০২০-এর দশকে প্রধান লড়াই অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে। ট্রাম্প শুল্ক, নিষেধাজ্ঞা ও বাজার প্রবেশাধিকারের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। এর জবাবে রাশিয়া-চীন-ভারত যৌথ বিনিয়োগ, মুদ্রা বিনিময় চুক্তি এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি স্যাক্স মনে করেন, ভারতকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার জন্য চীনের সমর্থন জরুরি। তবে সীমান্ত বিরোধ ও আস্থার ঘাটতি এই প্রক্রিয়ার বড় বাধা।
ভূ-অর্থনীতির উত্থান
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৈশ্বিক ক্ষমতার রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। রাশিয়া-চীন-ভারতের ঘনিষ্ঠতা কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং এটি পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একধরনের ভূরাজনৈতিক বার্তা। বিশাল জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রযুক্তি মিলিয়ে এই জোট অভ্যন্তরীণ বাজারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিকল্প আর্থিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা চাপ যত বাড়বে, এই ত্রয়ীর ঐক্য তত মজবুত হবে। এর ফলে বৈশ্বিক ক্ষমতার মেরুকরণ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বহুমেরুকেন্দ্রিক এক নতুন যুগের সূচনা করবে।