পাল্টা শুল্কের চাপ সত্ত্বেও এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টি-শার্ট রপ্তানিতে প্রথমবারের মতো শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও চীনের মতো দীর্ঘদিনের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোকে পিছিয়ে দিয়ে এ সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (USITC) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটি ১১৭টি দেশ থেকে ৩৫২ কোটি মার্কিন ডলারের টি-শার্ট আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারের টি-শার্ট, যা নিকারাগুয়ার (৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলার) চেয়ে বেশি।
গত ৩৬ বছর ধরে (১৯৮৯–২০২৪) যুক্তরাষ্ট্রের টি-শার্ট বাজারে হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, হংকং, জ্যামাইকা, মেক্সিকো ও চীন শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিল। তবে ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল থেকে সব দেশের পণ্যে ন্যূনতম ১০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ফলে শুল্কসুবিধাপ্রাপ্ত নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসকেও শুল্ক দিতে হয়, যা বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করে।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষে ওঠা আমাদের জন্য ইতিবাচক খবর। তবে ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া পাল্টা শুল্কের প্রভাবে এ অবস্থান ধরে রাখার বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের চাহিদা কমে গেলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ এখনও তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্যে ২০% শুল্কহার প্রযোজ্য, যা ভিয়েতনামের সমান এবং ভারত (৫০%) ও চীন (৩০%) এর চেয়ে কম। নিকারাগুয়াকেও এখন ১৮% শুল্ক দিতে হচ্ছে।
রপ্তানি চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৭৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে টি-শার্ট অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি পণ্য। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৫৮টি দেশে ৭৪৫ কোটি ডলারের টি-শার্ট রপ্তানি করেছে, যার প্রায় ১১% গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
গড় দামের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রতিটি টি-শার্ট রপ্তানি হয়েছে ১ ডলার ৭৬ সেন্টে। নিকারাগুয়া (১.৬৫ ডলার) ও চীন (১.৬৩ ডলার)-এর তুলনায় বেশি দামে হলেও ভিয়েতনাম (২.৬৮ ডলার) ও হন্ডুরাস (২.১০ ডলার)-এর তুলনায় কম দামে পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ।
শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে টি-শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল সাভারের জিএবি লিমিটেড (১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার)। দ্বিতীয় অবস্থানে এসডিএস ইন্টারন্যাশনাল (৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার) এবং তৃতীয় অবস্থানে আয়েশা ক্লথিং কো. (৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার)।
শীর্ষ দশে আরও রয়েছে—নিট এশিয়া লিমিটেড, ডিভাইন ইনটিমেটস, রাতুল অ্যাপারেলস, তাকওয়া ফেব্রিকস, জে এম ফেব্রিকস, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস ও ইয়র্ক ফ্যাশন।
বিশ্ববাজারে ইতিমধ্যেই জার্মানি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পোল্যান্ড ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে টি-শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এবার যুক্তরাষ্ট্রও সেই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় দেশের পোশাক খাতের জন্য এটি একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।