প্রকাশের তারিখ: ১৯ আগস্ট ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে এ উদ্যোগের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হলে সংস্কার কার্যকর হবে না; কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ (সংশোধন) ২০২৫ খসড়া নিয়ে আরও আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কী আছে
আইএমএফের সুপারিশে প্রস্তুতকৃত খসড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে—
-
গভর্নরের পদকে মন্ত্রিসভার সমমর্যাদায় উন্নীত করা
-
প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা
-
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গভর্নর প্রার্থী সুপারিশ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নিয়োগ দেবেন এবং সংসদীয় অনুমোদন লাগবে
-
পরিচালনা পর্ষদে গভর্নর, গভর্নরের মনোনীত দুই ডেপুটি-গভর্নর ও সরকারের মনোনীত আট পরিচালক অন্তর্ভুক্ত থাকবে
-
কোনো সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না
-
মনোনীত তালিকার বাইরে কোনো নিয়োগ দেওয়া যাবে না
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কার্যকর নয়
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার রাজনীতিকদের প্রভাব কমাতে চাইছে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এ উদ্যোগ টেকসই হবে না। তার মতে, গভর্নরের নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে হবে পেশাদারিত্ব ও সংসদীয় পর্যবেক্ষণনির্ভর, যাতে পদটি সাংবিধানিক মর্যাদা পায় এবং নিরাপত্তা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, কেবল আইন করলেই স্বাধীনতা বাস্তবে নিশ্চিত হবে না। তিনি বলেন, অতীতে অনেক কমিশন কাগজে স্বাধীনতা পেলেও রাজনৈতিক প্রভাবে তা কার্যকর হয়নি। তাই সংসদীয় অনুমোদন জরুরি।
সক্ষমতা ও জবাবদিহির প্রশ্ন
অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নীতিগতভাবে তিনি স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। তবে তার মতে, এটি কার্যকর করতে সক্ষমতা, সততা ও দক্ষতা অপরিহার্য। তিনি মনে করেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই শতভাগ স্বাধীনতা নেই; তাই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
আইএমএফ শর্তে সংস্কার
সরকার জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সংস্কার শেষ হবে। মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার। আইএমএফের ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে খসড়া অনুমোদন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।