গ্রীষ্মের দলবদলে বড় চমকগুলোর একটি ছিল হুলিয়ান আলভারেজের ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেওয়া। ম্যাচ টাইমের স্বল্পতা ও সিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নিজেকে খুঁজে না পাওয়ার কারণেই আলভারেজ ঘর বদলান। কারণ যা–ই হোক, আলভারেজের সিদ্ধান্ত সে সময় বিস্মিত করেছিল অনেককেই। সিটিতে দুই হাত ভরে পাওয়া সাফল্য ফেলে কদাচিৎ সফলতার মুখ দেখা আতলেতিকোতে যাওয়ার সমীকরণ অনেকেই তখন মেলাতে পারেননি।
কেউ কেউ তখন এই সিদ্ধান্তকে বোকামি বলেও মন্তব্য করেছিলেন। তবে অন্যরা যা দেখতে পারেননি, আলভারেজ ঠিকই সেই চিত্রটা দেখতে পেয়েছিলেন। প্রায় ছয় মাস পর এসে সেই চিত্রটা এখন বাকিদের কাছেও স্পষ্ট।
সিটিতে একাদশে জায়গা পেতে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে ধুঁকতে হচ্ছিল, আতলেতিকোতে সেই আলভারেজ পেয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। দলের পারফরম্যান্স এবং ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে দারুণ ভূমিকা রেখে চলেছেন এই আর্জেন্টাইন তরুণ। চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করলেন টানা তিন ম্যাচে (৫ গোল)। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে লেভারকুসেনের বিপক্ষে ২–১ গোলের জয়ে দুটি গোলই এসেছে তাঁর কাছ থেকে। এরপর নির্বাচিত হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সপ্তাহের সেরা খেলোয়াড়ও।
গত মৌসুমে সিটির হয়ে সব মিলিয়ে ৫৪ ম্যাচ খেলেছিলেন আলভারেজ। প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ৩১ ম্যাচ। দলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা ও স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড চোটে না পড়লে অবশ্য আলভারেজের এত বেশি ম্যাচে শুরুর একাদশে থাকা হতো কি না সন্দেহ আছে। তবে থেকেও যে খুব বড় পার্থক্য গড়তে পেরেছেন, তা নয়। বরং তাঁকে দলে নিয়ে টানা কয়েক ম্যাচে পয়েন্ট হারানোর পর গার্দিওলা আলভারেজকে ভুল কৌশলে খেলাচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল।
সে সময় তাঁর কাঁধে মূলত তুলে দেওয়া হয়েছিল ডি ব্রুইনার দায়িত্ব। কিন্তু বড় ম্যাচে খুব একটা পার্থক্য গড়তে পারেননি এই আর্জেন্টাইন। এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগে সিটির খেলা ১০ ম্যাচের মাত্র ২টিতে পুরো ৯০ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যার ফলে মৌসুম শেষেই সিটি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আলভারেজ এবং শেষ পর্যন্ত ছেড়েও যান।
আলভারেজের মতো একজন সৃষ্টিশীল এবং ম্যাচ বদলানোর ক্ষমতা রাখা ফুটবলারকে হারানো সিটিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্লেমেকারের ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্কোরিংয়েও দারুণ কার্যকর এই সেন্টার ফরোয়ার্ড। দলে থাকলে ধুঁকতে থাকা সিটিকে টেনে তোলার মতো সামর্থ্যও ছিল তাঁর। এমনকি এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো বিকল্পও আনতে পারেনি সিটি। ফলে হলান্ডের চোটে বা ছন্দহীন থাকা ম্যাচগুলোয় সিটিকে ব্যাপকভাবে ভুগতে হয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প স্ট্রাইকার না থাকায় আক্রমণভাগে বিশেষ কোনো বৈচিত্র্যও আনতে পারেননি গার্দিওলা।
অন্যদিকে আলভারেজকে দলে ভেড়ানোর পর বদলে গেছে আতলেতিকো। দলের হয়ে নিয়মিত পারফরম্যান্স করে চলেছেন এই তরুণ তুর্কি। চলতি মৌসুমে আলভারেজ এখন পর্যন্ত ৩১ ম্যাচে করেছেন ১৬ গোল। আর অ্যাসিস্ট করেছেন ২টি। তবে লিগের চেয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগেই আলভারেজ বেশি উজ্জ্বল। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতেও লেভারকুসেনের বিপক্ষে আতলেতিকোর ২–১ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোল করেছেন আলভারেজ। যে অবস্থা থেকে আতলেতিকোকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন, তা অনেক দিন মনে রাখার মতো। এক গোলে পিছিয়ে থাকা দশজনের দলটিকে জিতিয়েছেন দারুণ খেলে।
আলভারেজকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন লেভারকুসেন কোচ জাবি আলোনসোও, ‘আমি আলভারেজকে দারুণ মূল্যবান মনে করি। সে বিশ্বসেরাদের একজন। আতলেতিকোতে সে গুরুত্বপূর্ণ একজন। তার দলবদলের সিদ্ধান্তও বেশ প্রশংসনীয়। সে প্রায় শূন্য থেকে আতলেতিকোকে ম্যাচে ফিরিয়েছে। খুব অল্প কজনই এই কাজটা করতে পারে।’
আলভারেজের এই পারফরম্যান্স অবশ্য শুধু একটি ম্যাচের ব্যাপার নয়। তাঁর খেলার প্রভাব আতলেতিকোর সামগ্রিক পারফরম্যান্সেও পড়েছে। লা লিগায় বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে আছে দলটি।
শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ২। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭ ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হারে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে ৫ নম্বরে। এখন মৌসুমের বাকি সময়ে নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখে আলভারেজ দলকে শিরোপা এনে দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।