বিশ্বজুড়ে নদনদীগুলির অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। নদী একটি দেশের জীবিকা, পরিবেশ এবং সংস্কৃতির অমূল্য অংশ হলেও, অব্যাহত বর্জ্য ফেলা, অবৈধ বালু উত্তোলন, নদীর পানি ব্যবহারের অপব্যবহার এবং শিল্পকারখানার দূষণ তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের নদ-নদী বর্তমানে একটি কঠিন অবস্থার মুখোমুখি। অবৈধ বালু উত্তোলন, পানি দূষণ, নদীর জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদী থেকে পলি তোলার কারণে অনেক নদী এর প্রাকৃতিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলছে। এর ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং কৃষি জমির সেচের সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যার স্রোত বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ঘটছে।
নদী ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে নদীর পানি ব্যবহারের অপব্যবহারও উল্লেখযোগ্য। রিসোর্ট, শিল্পকারখানা, কৃষি খামারের পানি খরচের কারণে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া, অবাধে বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে, মৎস চাষ, পানি সরবরাহ, কৃষি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যও বিপর্যস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে বহু নদী একসময় নদী নয়, শুধু জলাশয়ে পরিণত হবে, এবং অনেক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। একদিকে নদী শুকিয়ে যাবে, অন্যদিকে তার আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়বে।
নদী রক্ষায় করণীয়:
- নদী রক্ষায় শক্তিশালী আইন এবং পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি করা।
- নদী থেকে বর্জ্য অপসারণ ও নিষিদ্ধ কার্যক্রম বন্ধ করা।
- সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রকল্প চালু করা, যা নদীর পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগী হবে।
- অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং তাদের সক্রিয়ভাবে নদী রক্ষার কাজে যুক্ত করা।
এছাড়া, প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নদী শাসন, পলি পরিষ্কারকরণ এবং জলজ উদ্ভিদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি।
আজ যদি আমরা এই সমস্যা সমাধানে না এগিয়ে আসি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নদী ও তাদের অবদান শুধু ইতিহাসে পড়বে। দেশের কৃষি, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নদ-নদী সংরক্ষণ অপরিহার্য।