সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিডিং কর্মসূচি এপ্রিল থেকে চালু হচ্ছে। দেশের ২০ হাজার বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় আসবে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ করতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রান্তিক ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। অনেকেই খালি পেটে স্কুলে আসে বা অপুষ্টিতে ভোগে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই স্কুল ফিডিং কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি দেশের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯,৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ উপজেলা উচ্চ বা অতি উচ্চ দারিদ্র্য প্রবণ।
ফিডিং কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীরা পাবে:
• প্রথম তিন দিন: ডিম ও বনরুটি
• পরের দুই দিন: ইউএইচটি দুধ ও বনরুটি
• অন্যদিন: পুষ্টিকর বিস্কুট ও মৌসুমি ফল
শিক্ষার্থী প্রতি খাবারের ব্যয় গড়ে ৩৯-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কমিটি কার্যক্রমের তদারকি করবে।
প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৫,৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। চলতি অর্থবছরে এর জন্য ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা পরবর্তী অর্থবছরে বেড়ে ২,১৬৪ কোটি টাকা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব দেশের সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যাতে পাঠদান ব্যাহত না হয়, সে বিষয়েও বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভোগে, তাই এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক প্রফেসর মো. আবদুস সালাম বলেন, “একটি দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করা জরুরি। এই কর্মসূচি শিক্ষাক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন বয়ে আনবে।”
বাগেরহাটের কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তারের মা শিরিন আক্তার বলেন, “আমার স্বামী চায়ের দোকানে কাজ করেন। মেয়েকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারি না। এই প্রকল্প চালু হলে ওর জন্য ভালো হবে।”
একই জেলার প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন মুক্তা বলেন, “দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে শিশুরা প্রায়ই খালি পেটে স্কুলে আসে। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে।”
সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
— প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক