সিলেটের আবহাওয়ার মতোই যেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং—একেবারে অনিশ্চিত ও অনির্ভরযোগ্য। কখন কী হবে, কিছুই বোঝা যায় না। আর এমন ব্যাটিং ঢঙে খেলতে নামলে পরিণতিও যে ভোগ করতে হবে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রথম দিনেই। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৯১ রানে।
চিরাচরিত ব্যাটিং বিপর্যয়ই দেখা গেল আবারও
বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস যেন একটা চেনা দৃশ্য। শুরুতে আশাব্যঞ্জক কিছু মুহূর্ত থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তা মিলিয়ে যায় বারবারের মতো। নাজমুল হোসেন শান্তর ৪০ ও মুমিনুল হকের ৫৬ ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি।
উইকেটে থিতু হয়েও উইকেট উপহার দেওয়ার প্রবণতা ছিল একাধিক ব্যাটারের মধ্যে। অধিনায়ক শান্ত যেভাবে অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল তাড়া করে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন, তা হতাশাজনক।
মুশফিকুর রহিমের আউটটিও ছিল দৃষ্টিকটু। সহজ শর্ট বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে।
মাহমুদুল, সাদমান ব্যর্থ; লেজে লড়াই জাকেরের
শুরুতেই ওপেনার মাহমুদুল ও সাদমান বিদায় নেন যথাক্রমে ১৪ ও ১২ রানে। মিডল অর্ডারে একমাত্র মুমিনুল কিছুটা লড়াই করলেও তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না।
শেষদিকে জাকের আলী ও হাসান মাহমুদের ৪১ রানের জুটিতে স্কোরবোর্ড কিছুটা শোভনীয় হলেও বড় সংগ্রহ গড়ার পথে তা যথেষ্ট ছিল না।
জাকের শেষ পর্যন্ত করেন ২৮ রান, যা জীবন পাওয়ার পরও কাজে লাগাতে পারেননি।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের শৃঙ্খলিত বোলিং
জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি নেন ৩ উইকেট, স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজাও তুলে নেন ৩টি।
তবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, মাসাকাদজার প্রথম ওভার আসে ম্যাচের ৩৮তম ওভারে। তারপরও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এমনভাবে উইকেট দিয়ে এসেছেন, যেন প্রতিপক্ষের পরিকল্পনারই অপেক্ষা করছিলেন!
জবাবটা দারুণভাবে দিল জিম্বাবুয়ে
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট করার পর দিনশেষে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন দলকে।
৬৭ রানে উইকেট না হারিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। ব্রায়ান বেনেট ৩৭ বলে অপরাজিত ৪০ রান, বেন কারেন অপরাজিত ১৭ রান করেছেন।
বাংলাদেশি বোলারদের নিষ্প্রভ সূচনা
হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ—কারোরই বোলিংয়ে তেমন ধার দেখা যায়নি।
উইকেটের বাড়তি বাউন্স কাজে লাগিয়েও বিপদে ফেলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ওপেনারদের।
পরিসংখ্যানেই প্রতিফলিত বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের দৈন্য
দেশের মাটিতে বাংলাদেশের শেষ ৮ ইনিংসে এটি ছিল ষষ্ঠবার ২০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার ঘটনা।
এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা শুধু ব্যাটিং পরিকল্পনার নয়, মানসিক দৃঢ়তার অভাবেরও পরিচয় দেয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬১ ওভারে ১৯১ রান
(মুমিনুল ৫৬, শান্ত ৪০, জাকের ২৮; মুজারাবানি ৩/৫০, মাসাকাদজা ৩/২১)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১৪.১ ওভারে ৬৭/০
(বেনেট ৪০*, কারেন ১৭*)
১ম দিন শেষে জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ১২৪ রানে
পরবর্তী দিনে বাংলাদেশের সামনে মূল লক্ষ্য হবে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া। তবে তার আগে দরকার আরও দৃঢ় ও শৃঙ্খলিত বোলিং। না হলে প্রথম টেস্টেই চাপে পড়ে যেতে পারে স্বাগতিকরা।