ঢাকার শেখেরটেক এলাকায় ১৭ বছর বয়সী কিশোরী লামিয়া শহিদ জসীম উদ্দিনের কন্যা আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাত ৯টায় নিজের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে জীবন শেষ করেন তিনি। তার মৃত্যুর পর, জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী ফেসবুকে পোস্ট করে লামিয়ার শেষ সময়ের মর্মস্পর্শী বর্ণনা তুলে ধরেন।
শ্রাবন্তী জানান, আত্মহত্যার কিছু ঘণ্টা আগে তিনি লামিয়ার সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। সেই সময় লামিয়া তার কষ্ট এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছিলেন, “আল্লাহ যা করে, সেটা নাকি ভালোর জন্যই করে। আমার কি ভালো করসে বলতে পারেন? আমার সঙ্গে খালি খারাপই হইসে!” শ্রাবন্তী আরও বলেন, লামিয়ার মৃত্যু শুধুমাত্র ধর্ষণের ট্রমা থেকে নয়, বরং সমাজের নোংরা মন্তব্য, কটূক্তি এবং চরিত্রহরণের সংস্কৃতি তাকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।
লামিয়ার মা এই ঘটনার পরে জানিয়েছেন, তার মেয়ে ইন্টার পরীক্ষার পর কোথাও নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে চেয়েছিলেন, যেখানে তাদের কেউ চিনবে না, কেউ আঙুল তুলবে না। তবে, সেই পরিকল্পনার আগেই লামিয়ার জীবন থেমে যায়।
ধর্ষণের পরপরই লামিয়া সামাজিক অবজ্ঞা, সন্দেহ এবং কানাঘুষার শিকার হন। সাবরিনা আফরোজের মতে, শুধু ধর্ষণকারীরা নয়, যারা লামিয়ার চরিত্র নিয়ে কটূক্তি করেছে, তাদেরও দায় এড়ানো উচিত নয়। তিনি মন্তব্য করেন, “লামিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফের একবার প্রমাণ হলো, ধর্ষণের পর শুধু অপরাধ নয়, সামাজিক বৈষম্য ও অবজ্ঞাও একটি মেয়েকে ধ্বংস করে দিতে পারে।”
এদিকে, ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে জানা যায়, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের কন্যা তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে অভিযুক্তরা তাকে পিছু নেয় এবং সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী এক বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। দুর্বৃত্তরা তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এই ঘটনায় সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী মন্তব্য করেছেন, “লামিয়ার মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি পুরো সমাজের বিকৃত মানসিকতার একটি ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি। যেখানে নির্যাতিতাও নিরাপদ নয় এবং দোষীদের বিচার আর অপেক্ষার চেয়ে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা হয়। ভিকটিম-ব্লেমিং আজও আমাদের নষ্ট সংস্কৃতির অংশ।”
লামিয়ার মৃত্যু, তার পরিবার এবং সমাজের কাছে একটি শোকাবহ ক্ষতি হলেও এটি সমাজের একটি গুরুতর সমস্যা এবং ধর্ষণ, সামাজিক বৈষম্য ও অবজ্ঞার সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।