বাংলাদেশি কবি দাউদ হায়দার জার্মানির বার্লিনে মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাত ৯টায় শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দাউদ হায়দার বার্লিনের রাইনিকেডর্ফ এলাকার একটি ভবনের ১২ তলায় একাকী বসবাস করতেন।
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে নিজের বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান কবি দাউদ হায়দার। দুর্ঘটনার পর প্রথমে স্থানীয় রাইনিকেডর্ফ হাসপাতালে, পরে নয়েকোলন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি পড়েছিলেন এবং তাঁর মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল এবং কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য গ্রহণ ও শ্বাসপ্রশ্বাসের চেষ্টা করা হয়েছিল।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। পরে তাঁকে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে সাধারণ কোমায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। জানুয়ারির প্রথম দিকে কবি দাউদ হায়দারকে বার্লিন থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রাইফভাল্ডারের একটি স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার পর, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁকে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়, যেখানে শনিবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দাউদ হায়দারের মৃত্যুর খবর মাইন চৌধুরীকে ফোনে জানানো হয় শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকের চিকিৎসক কর্তৃক। কবি দাউদ হায়দারের মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ বার্লিনে দাফন করা হতে পারে।
দাউদ হায়দার ষাটের দশকের সত্তরের দশকে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ কবিতাটি লেখার জন্য গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা হয় এবং পরে তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কলকাতায় ১৩ বছর থাকার পর, ১৯৮৬ সালে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় তিনি জার্মানি চলে যান এবং বার্লিনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
দাউদ হায়দার বাংলাদেশের প্রথম লেখক যিনি লেখালেখির কারণে নির্বাসিত হন। তিনি ৫০ বছর ধরে জার্মানিতে নির্বাসিত ছিলেন এবং একসময়ও দেশে ফিরতে পারেননি।
দাউদ হায়দারের জন্ম ১৯৫২ সালে পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে। তিনি ছিলেন এক সমৃদ্ধ সাহিত্যিক, যার লেখালেখি দেশের রাজনীতি ও সমাজকে প্রভাবিত করেছে।