ঢাকা, ২৮ জুন ২০২৫:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সংগঠনটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।
উমামা লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।”
ফেসবুক পোস্টে তিনি সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কাউন্সিল প্রক্রিয়া, নেতৃত্ব কাঠামো, দলীয় প্রভাব ও ব্যক্তিগত হয়রানিসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। পাশাপাশি জানান, তিনি আগেই কার্যত প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন সরে দাঁড়ালেন।
নানা অভিযোগ
উমামা ফাতেমার অভিযোগ, এনসিপি (ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন পার্টি) গঠনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি হয়নি। বরং তাকে চাপের মুখে কাজ করতে হয়েছে এবং অনলাইন ও অফলাইনে ব্যক্তিগতভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি—পোকার মতো সুবিধাবাদীরা ভেতর থেকে প্ল্যাটফর্মকে খেয়ে ফেলেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিজের মুখপাত্র পরিচয় থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের পেজ ব্যবহারে তাকে অবহেলা করা হয়েছে, এমনকি সেই পেজ থেকেই তার বিরুদ্ধে প্রচারণাও চালানো হয়েছে।
কাউন্সিল ও ভোট নিয়ে ক্ষোভ
পোস্টে তিনি চলতি বছরের কাউন্সিল প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনা করেন। জানান, তিনি প্রথমে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ মুহূর্তে একটি ‘Goodwill’ থেকে ভোট দেন। তবে পরে দেখেন, কাউন্সিলে এমন ব্যক্তিরাও জায়গা পেয়েছেন, যারা নির্বাচনে প্রার্থীই ছিলেন না। এতে করে তিনি প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেন।
অভ্যুত্থানের আদর্শ বনাম বাস্তবতা
২০২৪ সালের জুলাইয়ের ‘অভ্যুত্থান-সদৃশ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন’ প্রসঙ্গে উমামা বলেন, সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেরণায় তিনি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন, কিন্তু বাস্তবে গোষ্ঠীগত স্বার্থ, পদ-পদবি ভাগাভাগি ও স্বেচ্ছাচারিতাই প্রাধান্য পেয়েছে।
তিনি লেখেন, “আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্ল্যাটফর্ম সেই স্বপ্ন রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বিদায়
পোস্টের শেষভাগে উমামা লেখেন, প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে গিয়ে তিনি মানসিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন এবং নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের আচরণে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
তবে পাশাপাশি তিনি একদল ‘Goodwill’ সম্পন্ন কর্মীর প্রশংসা করেন, যারা এখনও আদর্শিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। বিদায় বার্তায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, “আমি ভেঙে পড়ছি না, গুছিয়ে আনছি সবকিছু।”
সংগঠনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে উমামা ফাতেমার এই ঘোষণার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।