মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শুনানি পরবর্তী সোমবার পর্যন্ত মুলতবি
প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ১ জুলাই ২০২৫
জুলাই অভ্যুত্থনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন–এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছে প্রসিকিউশন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই আবেদন পেশ করেন। শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী সোমবার।
কী ঘটেছিল আদালতে
আদালতের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার–এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এদিন শুনানি নেয়। শুনানির সময় সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “জুলাই মাসে সংঘটিত পাঁচটি ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন। সেই প্রমাণসহই অভিযোগ গঠন চাওয়া হয়েছে।”
তবে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অভিযোগ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় ১৫ দিনের সময় চান। আদালত সাত দিন সময় দিয়ে আগামী সোমবার (৮ জুলাই) নতুন তারিখ নির্ধারণ করে।
মামলার পটভূমি
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী ছাত্র ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর, ট্রাইব্যুনাল দুইটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়। এরপর চলতি বছরের ১২ মে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে তাঁকে জুলাই গণহত্যার প্রধান ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কী বলা আছে অভিযোগে?
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে:
-
১৬ জুলাই ঢাকায় বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর সরকারি নির্দেশে গুলি বর্ষণ,
-
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম ও নির্যাতন পরিচালনা,
-
নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার পরিকল্পনা ও অনুমোদন,
-
রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ,
-
এবং রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বৈধতা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ।
এরই প্রেক্ষিতে ১ জুন আদালত শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতের আদেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে তাঁদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
প্রসিকিউশন বলছে, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইতিহাসে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।” তারা দাবি করেছে, অভিযুক্তদের বিচার হলে দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভাঙবে এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আপাতত মামলার শুনানিতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আগামী সোমবার অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়ায় তাঁরা যুক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
এই মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন যুগে প্রবেশ করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচারিক প্রক্রিয়া বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে।
আগামী ৮ জুলাই এর শুনানিতে অভিযোগ গঠন চূড়ান্ত হলে মামলাটি বিচারিক পর্বে প্রবেশ করবে—যা বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।