ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫:
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক পুনর্বিবেচনার অনুরোধে তিন মাস পরে আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেই জবাবে কোনো ছাড় নয়, বরং আগের ঘোষণাকে খানিকটা কমিয়ে নতুন করে ৩৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
এতে বাংলাদেশের জন্য মোট শুল্কহার দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫০ শতাংশ—যেখানে এতদিন গড় হার ছিল ১৫ শতাংশের মতো। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রতিযোগীরা এগিয়ে, বাংলাদেশ বঞ্চিত
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি শুল্কের খড়্গে পড়েছে বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সই করে শুল্ক কমিয়েছে। ভারতও এমন একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে না পারায় এই বাড়তি শুল্কের চাপ বহন করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে।
চিঠির পেছনের প্রেক্ষাপট
চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন শতাধিক দেশের ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তাতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব আসে, যা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বরাবর একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান এবং অন্তত তিন মাস শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন।
চিঠিতে ইউনূস লেখেন, “আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডা পূর্ণ সমর্থনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।” এরই অংশ হিসেবে সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে ৬২৬টি আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, যার মধ্যে ১১০টি পণ্যে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তাতেও ট্রাম্প প্রশাসন সন্তুষ্ট হয়নি।
ট্রাম্পের চিঠিতে ‘শক্ত বার্তা’
৭ জুলাই তারিখে ট্রুথ সোশালে প্রকাশিত চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক সমকক্ষ নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।”
চিঠিতে ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দেন, “বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করে, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না বরং দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হবে।” পাশাপাশি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যদি শুল্ক বাড়ায়, আমাদের পক্ষ থেকেও ৩৫ শতাংশ হারে শুল্কের সঙ্গে সেটি যোগ হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যদি বাজার উন্মুক্ত করা হয় এবং বাণিজ্য বাধা সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই শুল্কহার পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকবে।
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি খাত নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের, যার বড় অংশই তৈরি পোশাক খাতের পণ্য। শুল্ক হার ৫০ শতাংশে উন্নীত হলে এ খাতে অর্ডার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন সময় দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করার এবং দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার ভিত্তিতে একটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার।