ওয়াশিংটন, ১৬ জুলাই ২০২৫:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে রাশিয়াকে শান্তির সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেই সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “মস্কোকে লক্ষ্যবস্তু করা ইউক্রেনের পক্ষে অনুচিত কাজ হবে।”
এই মন্তব্য আসে মাত্র একদিন পর, যখন ‘ফাইনান্সিয়াল টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, গত ৪ জুলাই ট্রাম্প সরাসরি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন:
“ঠিকঠাক অস্ত্র পেলে আপনি কি রাশিয়ার ভিতরে ঢুকে মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে হামলা চালাতে পারবেন?”
জেলেনস্কির জবাব ছিল সরাসরি—“অবশ্যই পারব, আপনি যদি অস্ত্র দেন।”
দ্বৈত বার্তা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ট্রাম্পের এই কথোপকথন প্রকাশ্যে আসার পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা, অন্যদিকে ইউক্রেনকে প্রত্যক্ষভাবে আক্রমণ চালাতে উসকানি— এই দ্বৈত অবস্থান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
শান্তির ডাক, কিন্তু শর্তসহ
সোমবার (১৪ জুলাই) ট্রাম্প ঘোষণা দেন, রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে। তিনি বলেন, “যদি এই সময়সীমার মধ্যে রাশিয়া চুক্তিতে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী সামরিক সহায়তা দেবে।”
এই ঘোষণার সঙ্গে যুক্ত হয় উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের আশ্বাস, যা কিয়েভের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর বার্তা দেয়। তবে হোয়াইট হাউসের পরদিনের অবস্থান এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন সংশয় তৈরি করেছে।
ক্রেমলিনের পাল্টা হুঁশিয়ারি
রাশিয়া ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ ও উসকানি দিয়ে আমেরিকা শান্তি প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করছে। তারা আরও হুঁশিয়ার করে বলেছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক সহযোগিতা রাশিয়ার পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে।
বিশ্লেষণ: ট্রাম্পের জটিল বার্তা
বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের ‘ডিল-মেকার’ ভাবমূর্তির সঙ্গে তাঁর ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন নতুন নয়। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে এমন স্পষ্ট দোদুল্যমানতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও প্রভাব ফেলছে।
এদিকে ইউক্রেনীয় জনগণ ও জেলেনস্কির নেতৃত্ব আশা করছে—মার্কিন সহায়তা অব্যাহত থাকবে, তবে এমন অবস্থান পাল্টানো বিশ্বাসযোগ্যতা ও কৌশলগত স্থিরতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সূত্র: ফাইনান্সিয়াল টাইমস, হোয়াইট হাউস ব্রিফিং, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা
ছবি: সংগৃহীত