প্রকাশের তারিখ: ১৯ আগস্ট ২০২৫
প্রাচীনকালে মানুষ বিশ্বাস করত, পৃথিবীর একেবারে উত্তর প্রান্তে রয়েছে এক কল্পলোক—‘আলটিমা থুলে’। আজকের ভূরাজনীতিতে সেই কল্পনার প্রতিচ্ছবি যেন ফুটে উঠল আলাস্কায় অনুষ্ঠিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে।
বড় ছাড়, সামান্য অর্জন
আলাস্কার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আয়োজিত এই বৈঠকে ট্রাম্প রাশিয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য ছাড় দিলেও বিনিময়ে কোনো দৃশ্যমান সাফল্য আনতে পারেননি। বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি কূটনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে বার্তা গেছে—ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধাপরাধ, শিশু অপহরণ কিংবা ক্ষতিপূরণ ইস্যুগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না।
পুতিন এ সময় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাশিয়া নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মানবে না। উল্টো তিনি প্রস্তাব করেন, ইউক্রেন যেন কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের প্রস্তাব রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করবে।
ট্রাম্পের ‘আলটিমা থুলে’
ট্রাম্প বিশ্বাস করেছিলেন, দেশীয় রাজনীতির মতো অতিরঞ্জিত প্রতিশ্রুতি ও হুমকি দিয়েই তিনি বিদেশি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে—রাশিয়া এসব হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং রাশিয়ান মিডিয়ায় ট্রাম্পকে বিদ্রূপ করা হচ্ছে।
মস্কো ট্রাম্পের সামরিক প্রদর্শনকেও দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্রে সেনা নামানোর ঘটনায় যেখানে আমেরিকানরা ভীত হয়, রাশিয়ার চোখে তা কেবল অস্থিরতা ও নেতৃত্বহীনতার নিদর্শন।
ভূরাজনীতির ঝুঁকি
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ছাড়গুলো বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
-
যদি সীমান্ত পরিবর্তনের জন্য আগ্রাসন বৈধতা পায়, তবে তা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে।
-
যদি রাশিয়ার মতো দেশকে অন্য দেশের বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়া হয়, তবে আরও আগ্রাসনের দ্বার খুলবে।
-
যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি উপেক্ষা করলে সারা বিশ্বে যুদ্ধ যেন বৈধ হয়ে যাবে।
পুতিনের কৌশল, ট্রাম্পের বিভ্রম
পুতিন বিশ্বাস করেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার গড়ে তুলবে। ট্রাম্প আবার ভাবেন, শান্তির কৃতিত্ব পেলেই তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিন্তু নীতি নির্ধারণে সক্রিয় না হয়ে পুতিনের কথাই পুনরাবৃত্তি করায় তিনি কার্যত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছেন।
পুতিন বৈঠকের শেষে ট্রাম্পকে মস্কোয় আমন্ত্রণ জানান। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল রাশিয়ার দ্বিমুখী কৌশল—একদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রাখা।
সামনে কী?
ট্রাম্প পুতিনের কাছ থেকে কোনো যুদ্ধবিরতি আনতে পারেননি। তাঁর সামনে এখন দুটি পথ—
১. কল্পনার দুনিয়ায় পড়ে থাকা, যেখানে তিনি শান্তির নামে ছাড় দিয়ে যাবেন।
২. নাকি রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়িয়ে যুদ্ধের সমাপ্তির পথে এগোনো।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের এসব ছাড়কে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্য ও নীতি থেকে স্পষ্ট—আলাস্কায় এসে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ‘আলটিমা থুলে’-তেই পৌঁছেছেন, অর্থাৎ কল্পনার সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছেন।
সূত্র: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট (টিমোথি স্নাইডার), অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ