প্রকাশের তারিখ:
৯ অক্টোবর ২০২৫
সারা দেশে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হবে—এই উদ্যোগকে নিরাপদ ও কার্যকর বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ফার্মাকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘টাইফয়েড টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অনুমোদিত ও পরীক্ষিত। তাই এ নিয়ে ভীত বা বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
🔹 নিরাপদ ও কার্যকর টিকা
ডা. সায়েদুর জানান, নতুন এই টিকায় প্রোটিন ও শর্করা—দুই উপাদানই রয়েছে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ফলে এটি অন্যান্য টাইফয়েড টিকার তুলনায় উন্নত ও কার্যকর।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার কখনোই এমন কোনো টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় না, যাতে সামান্যতম ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা থাকে। ইপিআই কর্মসূচির আওতাধীন সব টিকা সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও পরিবহন করা হয়।”
🔹 ভয় বা বিভ্রান্তি নয়
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, টিকা নেওয়ার পর হালকা জ্বর, ইনজেকশনের জায়গায় লালচে ভাব বা ব্যথা, ক্লান্তি অনুভূতি হতে পারে—যা সাময়িক এবং সাধারণ প্রতিক্রিয়া।
“অনেক সময় টিকা দেওয়ার আগে বা পরে কিছু কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ভীতিজনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস’ বলা হয়, যা টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়,” — তিনি ব্যাখ্যা করেন।
🔹 হালাল সনদপ্রাপ্ত টিকা
ধর্মীয় উদ্বেগ দূর করে তিনি বলেন, “টাইফয়েড টিকায় শরিয়তবিরোধী কোনো উপাদান নেই। এটি সৌদি হালাল সেন্টারের হালাল সনদপ্রাপ্ত।”
🔹 কেন জরুরি টাইফয়েড টিকা
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডির তথ্য তুলে ধরে ডা. সায়েদুর জানান, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৯৩ হাজারের বেশি মানুষ। মৃতদের বড় অংশই দক্ষিণ এশিয়ার।
একই বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে মারা যান, যাদের ৬৮ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
তিনি বলেন, “টাইফয়েড জ্বরে ব্যবহৃত অনেক অ্যান্টিবায়োটিক এখন কাজ করছে না। ভয়াবহ ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই টিকা নেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের আক্রান্তের হার, মৃত্যুহার এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ—সবই কমে আসবে।”
🔹 টিকাদান কর্মসূচি
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে সারা দেশের টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি, যেখানে ১৫ বছরের নিচের প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এক ডোজ টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
শেষ কথা:
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান সকল অভিভাবককে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘বিভ্রান্তিতে না পড়ে নির্ভয়ে সন্তানদের টাইফয়েড টিকা দিন, এটি তাদের জীবনরক্ষাকারী সুরক্ষা।’
