১৮ মাসের অবরোধ শেষে উত্তর দারফুরের রাজধানী দখল, পালিয়ে বাঁচছে হাজারো মানুষ
প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২৫ |
পশ্চিম সুদানের দারফুর অঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্যারামিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ১৮ মাসের অবরোধ শেষে উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের দখল নিয়েছে। এরপর থেকেই স্থানীয় জনগণের ওপর ব্যাপক নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
আল-জাজিরা, রয়টার্স ও জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, এবং পালিয়ে বাঁচা লোকজনের বর্ণনা যেন এক “জীবন্ত গণহত্যার চিত্র”।
🔹 পালিয়ে বাঁচা মানুষের করুণ বর্ণনা
এল-ফাশের থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে তাওইলা শহরে আশ্রয় নেওয়া তরুণ আলখেইর ইসমাইল জানান—
“আমরা প্রায় ৩০০ জন পালাচ্ছিলাম। আরএসএফ আমাদের আটকায়। পরিচিত একজন যোদ্ধা চিনে ফেলায় আমি বেঁচে যাই। কিন্তু আমার সহপাঠীসহ সবাইকে তারা হত্যা করে।”
অন্যদিকে তাহানি হাসান বলেন,
“তিনজন যুবক আমাদের সামনে এসে গুলি চালিয়ে থামতে বলে। তারা আরএসএফের পোশাক পরে ছিল। আমাকে মারধর ও তল্লাশি করে—যে ছেলেটা আমাকে মারছিল, সে আমার মেয়ের থেকেও ছোট।”
ফাতিমা আব্দুল রহিম, যিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাঁচ দিন হাঁটতে হাঁটতে তাওইলায় পৌঁছেছেন, বলেন—
“তারা আমাদের ছেলেদের মেরেছে, সব কিছু নিয়ে গেছে। পরে জানতে পারি, আমাদের পরের দলে থাকা মেয়েদের ধর্ষণ করেছে।”
🔹 জাতিসংঘের উদ্বেগ ও মৃত্যুর মিছিল
জাতিসংঘ জানায়, গত রোববার থেকে বুধবারের মধ্যে ৬২ হাজার মানুষ এল-ফাশের ছেড়ে পালিয়েছে।
এর আগে শহরটিতে ছিল আড়াই লাখের বেশি বাসিন্দা।
“ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)” জানিয়েছে, মাত্র পাঁচ হাজার মানুষ নিরাপদে তাওইলায় পৌঁছাতে পেরেছে।
এমএসএফের জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাশারি বলেন,
“সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো—মানুষদের পালানোর পথে হত্যা করা হচ্ছে, আটকানো হচ্ছে বা তাড়া করা হচ্ছে।”
🔹 আরএসএফের অস্বীকার, আন্তর্জাতিক মহলের সংশয়
গত বুধবার রাতে আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেতি’ দাগালো তার বাহিনীকে বেসামরিকদের রক্ষার নির্দেশ দেন এবং অপরাধীদের শাস্তির আশ্বাস দেন।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন,
“এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসযোগ্য নয়। তদন্তের বদলে অপরাধ ঢাকার চেষ্টা চলছে।”
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরএসএফের এক কমান্ডার দাবি করেন,
“এসব অভিযোগ সেনাবাহিনীর পরাজয় ঢাকতে তৈরি মিডিয়ার প্রচারণা।”
🔹 ভয়াবহ মানবিক সংকট
জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী—
- 
এ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ নিহত
 - 
প্রায় দেড় কোটি বাস্তুচ্যুত
 - 
দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে
 - 
ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে
 
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর এল-ফাশের মাতৃসদন হাসপাতালে অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে, এবং প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
🔹 নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের আশঙ্কা
পাশের উত্তর কর্ডোফান রাজ্যের বারা এলাকায় নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, কর্ডোফানের রাজধানী এল-ওবেইদ হতে পারে পরবর্তী বড় যুদ্ধক্ষেত্র।
এর আগে জুলাইয়ে আরএসএফের হামলায় সেখানে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিল।
🔹 আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরকে অবিলম্বে মধ্যস্থতা ও মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি।
সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স, জাতিসংঘ, এমএসএফ
									 
					