প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন–৬–এর ব্যয় কমানো হলো। তৃতীয় সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭৫৪ কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে এবং প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি ইতিমধ্যে সংশোধিত প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। এখন এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
🔹 প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি
এমআরটি লাইন–৬ এর ২০.১ কিলোমিটার উত্তরা–মতিঝিল অংশ ইতিমধ্যে চালু রয়েছে। বর্তমানে চলছে ১.১৬ কিলোমিটার মতিঝিল–কমলাপুর সম্প্রসারণের কাজ, যা আগামী ১৮ মাসের মধ্যে শেষ হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, কমলাপুর অংশে ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর পরবর্তী ১৮ মাস থাকবে ত্রুটিজনিত দায়ভার (Defect Liability Period) হিসেবে।
🔹 ব্যয়ের ইতিহাস ও সংশোধন
প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন পায় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১,৯৮৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩,৪৭১.৯৯ কোটি টাকা।
তৃতীয় সংশোধনে ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩২,৭১৭.৭২ কোটি টাকা—অর্থাৎ ৭৫৪ কোটি টাকা বা ২.৯৫% হ্রাস। এর মধ্যে
-
সরকারি অর্থায়ন: ১২,৫২১.৯৬ কোটি টাকা,
-
জাইকা ঋণ: ২০,১৯৫.৭৬ কোটি টাকা।
🔹 কোন খাতে ব্যয় কমেছে
প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল ওহাব জানান, কিছু খাতে সাশ্রয়ের ফলে মোট ব্যয় কমেছে।
বিশেষভাবে—
-
ভূমি অধিগ্রহণে সাশ্রয়: ১,২১১.৭২ কোটি টাকা (অতিরিক্ত ৩.৫৬ হেক্টর জমির প্রয়োজন হয়নি)
-
স্টেশন প্লাজা বাতিল: ১৬৪ কোটি টাকা
-
সিভিল ও স্টেশন নির্মাণ: ১১৬ কোটি টাকা
-
ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল খাত: ৯০.৪৫ কোটি টাকা
-
পুনর্বাসন পরামর্শ সেবা: ২.৯৮ কোটি টাকা
🔹 ব্যয় বেড়েছে যেসব খাতে
অন্যদিকে কিছু খাতে ব্যয় বেড়েছে, যেমন—
-
বেতন, ভাতা ও অফিস ব্যয়: ১৬৭ কোটি টাকা
-
সাধারণ পরামর্শ সেবা: ২২২.২৫ কোটি টাকা
-
বিদেশি ঋণের মূলধন ও সুদ: ২৭০ কোটি টাকা
-
রোলিং স্টক ও সরঞ্জাম ক্রয়: ৫৬১.১৭ কোটি টাকা
🔹 সরকারের ব্যয় পর্যালোচনা উদ্যোগ
ডিএমটিসিএল–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন,
“বিদেশি ঋণের চাপ কমাতে সরকার এখন সব মেট্রো প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাদ দিয়ে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কমলাপুর থেকে মতিঝিলের বিদ্যুতায়ন ও সিগন্যালিং খাতে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে।
🔹 সামগ্রিক চিত্র
এমআরটি লাইন–৬ শুধু বাংলাদেশের পরিবহন খাতে নয়, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনায়ও এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করায় বিশেষজ্ঞরা একে “অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন।
সূত্র: পরিকল্পনা কমিশন, ডিএমটিসিএল, জাইকা
