প্রকাশিত: সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর মৃত্যুর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবানবন্দি প্রদান করেন এবং ভিডিও সাক্ষ্যও রেকর্ড করা হয়।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তার মৃত্যুর পর প্রসিকিউশন জানায়, উমরের জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালে গ্রহণের জন্য আবেদন করা হবে কি না—সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিফ প্রসিকিউটর। একই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
মামলার প্রেক্ষাপট
-
জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় বদরুদ্দীন উমর ছিলেন দ্বিতীয় সাক্ষী।
-
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত জবানবন্দি দিয়েছেন।
-
তার বক্তব্যে উঠে আসে শেখ হাসিনার শাসনকাল, দমননীতি, নির্বাচন কারচুপি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং আওয়ামী লীগের পতন প্রসঙ্গ।
উমরের জবানবন্দির মূল বক্তব্য
-
গণঅভ্যুত্থান: তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ফোরক ও রূপান্তরমূলক ঘটনা। এতে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
-
আওয়ামী লীগের পতন: উমরের মতে, এ অভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিণতি। জনগণের আস্থা হারিয়ে দলটি পুনরুত্থানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
-
নির্বাচন কারচুপি: ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন শেখ হাসিনা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
-
মানবাধিকার লঙ্ঘন: গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ‘আয়না ঘর’-এর মতো টর্চার সেলের উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধীদলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল।
-
ভারতের প্রভাব: শেখ হাসিনার শাসন সম্পূর্ণভাবে ভারতের কৌশল ও স্বার্থরক্ষায় পরিচালিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
-
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: উমরের ভাষায়, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রাজনৈতিক রেটোরিক হিসেবে ব্যবহার করেছে, তবে প্রকৃত অর্থে তা বাস্তবায়ন করেনি।
প্রসিকিউশনের অবস্থান
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুর পর তার লিখিত ও ভিডিও জবানবন্দি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না—সেটি আইনি প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে।