প্রকাশের তারিখ: শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তিনি রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
দেশে ফিরে শহিদুল আলম বলেন,
“বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, গাজার মানুষ এখনো মুক্ত হয়নি। তারা এখনও আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি।”
দৃকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তার এই বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। তিনি বাংলাদেশ ও তুরস্ক সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,
“আমাদের মতো আরও হাজার ফ্লোটিলা যাওয়া দরকার, যত দিন না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।”
দেশে ফেরার মুহূর্ত
শহিদুল আলমকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ও মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, আলোকচিত্রী ও গবেষক মুনেম ওয়াসিফসহ অনেক শুভানুধ্যায়ী।
দৃকের ইনোভেশন ম্যানেজার রাহাত খান জানান, শনিবার সকাল সাতটার দিকে দৃকের ফেসবুক পেজে শহিদুল আলমের দেশে ফেরার ছবি প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের পেজেও তার ফেরার ছবি পোস্ট করা হয়।
মুক্তির প্রেক্ষাপট
গত বুধবার গাজা অভিমুখী মানবিক সহায়তাবাহী ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর একটি নৌবহরে অংশ নেন শহিদুল আলম। ইসরায়েলি বাহিনী ওই নৌবহরে আক্রমণ চালিয়ে অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও নাবিকদের আটক করে। পরবর্তীতে শহিদুল আলমসহ অনেককে ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়।
এই নৌবহরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন। তারা গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা ও ফিলিস্তিনের ওপর চলমান হামলা বন্ধের দাবিতে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
কূটনৈতিক তৎপরতা ও মুক্তি
শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। এর ফলেই শুক্রবার তিনি মুক্তি পান এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শহিদুল আলমের মুক্তিতে সহায়তা করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মানবাধিকার ও সাংবাদিকতার এক প্রতীক
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম শুধু ফটোগ্রাফার নন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীন মিডিয়া আন্দোলন ও নাগরিক অধিকার রক্ষায়ও সোচ্চার কণ্ঠস্বর। তার প্রতিষ্ঠিত দৃক ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট দক্ষিণ এশিয়ার ভিজ্যুয়াল জার্নালিজমে নতুন ধারা তৈরি করেছে।
উপসংহার
দেশে ফেরার পর শহিদুল আলম আবারও আহ্বান জানিয়েছেন—
“ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।”
