প্রকাশের তারিখ: ৭ অক্টোবর ২০২৫
মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দেশটির সরকারি স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি ‘পিআরআরএম ২.০’ (Program Rekalibrasi Repatriasi Migran 2.0)–এর আওতায় প্রতিদিন শতশত প্রবাসী কুয়ালালামপুর অভিবাসন দপ্তরের সামনে ভোরের আগে থেকেই সারিতে দাঁড়াচ্ছেন, যেন তারা দ্রুত দেশে ফেরার সুযোগ পান।
💬 অভিবাসন দপ্তরের তথ্য
কুয়ালালামপুর অভিবাসন দপ্তরের পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সাউপি ওয়ান ইউসুফ জানান, প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হওয়ায় আবেদনকারীরা আগের রাত থেকেই অফিসের সামনে সারিতে থাকেন। কেউ কেউ রাত ৯টা বা ১০টা থেকেই অপেক্ষা শুরু করেন পরের দিনের প্রক্রিয়ার জন্য।
তিনি বলেন,
“মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু কুয়ালালামপুরেই মোট ৭ হাজার ৫৯৫ জন অবৈধ প্রবাসী এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকের সংখ্যা বেশি।”
🧾 সীমিত প্রক্রিয়া, বিকল্প রাজ্যের পরামর্শ
অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবেদনকারীদের ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ সংগ্রহসহ একাধিক ধাপ সম্পন্ন করতে হয়, ফলে প্রতিদিনের প্রক্রিয়াকরণ সীমিত। তাই আবেদনকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা চাইলে কম ভিড়যুক্ত রাজ্য যেমন পাহাং, কেলান্তান, তেরেঙ্গানু, কেদাহ বা নেগেরি সেমবিলান থেকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেন।
🧳 কেন আত্মসমর্পণ করছেন প্রবাসীরা
অভিবাসন কর্মকর্তাদের মতে, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরেননি। কেউ পরিবারের অসুস্থতার কারণে, কেউ দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। অনেকে আবার দশ বছর পর্যন্ত অবৈধভাবে থাকার পর এখন আইনি ঝুঁকি এড়াতে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
ওয়ান সাউপি বলেন,
“পিআরআরএম ২.০ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা ও নিজ খরচে দেশে ফেরার টিকিট কিনলেই দেশে ফেরার সুযোগ মিলছে। কিন্তু অভিযানে ধরা পড়লে রিমান্ড, আদালত প্রক্রিয়া ও উচ্চ জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়।”
🗓 কর্মসূচির সময়সীমা ও শর্ত
পিআরআরএম ২.০ কর্মসূচি চলবে ২০২৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
এই উদ্যোগের আওতায় বৈধভাবে দেশে ফেরার জন্য প্রবাসীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—
- 
বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে
 - 
১৪ দিনের মধ্যে ফেরার বিমান টিকিট থাকতে হবে
 - 
অভিবাসন দপ্তরের যে কোনো প্রয়োগ বিভাগে উপস্থিত হতে হবে
 - 
৫০০ রিঙ্গিত কম্পাউন্ড ফি পরিশোধ করতে হবে
 
অনুমোদিত আবেদনকারীদের ২০ রিঙ্গিত ফি দিয়ে বিশেষ অস্থায়ী পাস প্রদান করা হয়, যা দেশে ফেরার দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে কালো তালিকা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না।
🔍 বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকদের মতে, পিআরআরএম ২.০ কর্মসূচি একদিকে মানবিক উদ্যোগ, অন্যদিকে এটি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাসের কৌশলের অংশ।
এই উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে থাকা শ্রমিকরা আটক বা শাস্তির আশঙ্কা ছাড়াই দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন, যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু শ্রমিকের কাছে বড় স্বস্তির বিষয়।
উপসংহার:
মালয়েশিয়ার সরকারের এই উদ্যোগের ফলে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের মধ্যে আত্মসমর্পণের প্রবণতা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
									 
					