প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম প্রবাসী অংশগ্রহণকারী ও এনসিপি সমর্থক চট্টগ্রামের আব্দুল হামিদ। দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও বিদেশের মাটিতে বন্দিদশার অবসান ঘটেনি তার। বুধবার (৮ অক্টোবর) কারাগারে অসুস্থ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে নিশ্চিত করেছে এনসিপির আন্তর্জাতিক সেল।
বিস্তারিত প্রতিবেদন:
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় আব্দুল হামিদকে ‘প্রবাসী যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। মৃত্যুর খবরটি প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আন্তর্জাতিক সেলের সহ-সম্পাদক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ।
তিনি জানান, “দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও বিদেশের মাটিতে বন্দি থেকে গেছেন আমাদের একনিষ্ঠ কর্মীরা। আব্দুল হামিদ শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে দেশপ্রেমের প্রমাণ রেখে গেছেন।”
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রবাসীদের মধ্যে এখনো ২৫ জন বিভিন্ন কারাগারে আটক আছেন। আব্দুল হামিদ তাদেরই একজন ছিলেন। দীর্ঘ কারাবাস ও শারীরিক জটিলতার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রবাসীদের মুক্তির দাবি:
এনসিপি ডায়াস্পোরা ইউনিট জানিয়েছে, এ প্রবাসীদের মুক্তি আদায়ে তারা শুরু থেকেই কাজ করে আসছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান এবং তারিক আদনান মুনের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“জুলাই আন্দোলনের প্রবাসী কারাবন্দীদের মুক্ত করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ব্যর্থতা। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, এ বন্দিদের মুক্তি ও দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে।”
দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন:
আলাউদ্দিন মোহাম্মদ তার পোস্টে আগস্ট মাসে দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো ২৫ জন আটক প্রবাসীর মুক্তির আবেদনপত্রও প্রকাশ করেন।
এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঠানো ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়,
“গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণআন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় এ ২৫ জন প্রবাসীকে আটক করা হয়। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ দূতাবাসের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই দুবাই কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তারা আরও উল্লেখ করেন,
“এ ঘটনা প্রবাসী নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার হরণের শামিল এবং মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। দূতাবাসের উচিত ছিল নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো, বিপরীতে অবস্থান নেওয়া নয়।”
সংগঠনের তিন দফা দাবি:
এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স অবিলম্বে নিম্নলিখিত তিনটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে—
১. সব অভিযোগ প্রত্যাহার ও একটি কনস্যুলার যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপন।
২. কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগ নিয়ে ২৫ জন বন্দিকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা।
৩. যেসব কর্মকর্তা দূতাবাস থেকে দুবাই পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
উপসংহার:
প্রবাসে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আটক থাকা বাংলাদেশিদের মুক্তি এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আব্দুল হামিদের মৃত্যু এই ইস্যুকে আবারও সামনে এনেছে। এনসিপি ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, বিদেশের মাটিতে যারা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে থেকেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের রক্ষা করা—শাস্তি দেওয়া নয়।
									 
					