প্রকাশিত: সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এই সিদ্ধান্তে যোগ দেবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এ সিদ্ধান্তকে একদিকে যেমন প্রতীকী পদক্ষেপ বলা হচ্ছে, অন্যদিকে এটি ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতীকী হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
বর্তমানে কাগজে কলমে স্বীকৃত সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী ছাড়াই ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তারা অলিম্পিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে অংশ নেয়, জাতিসংঘে তাদের স্থায়ী পর্যবেক্ষক মর্যাদাও রয়েছে। তবে পূর্ণ রাষ্ট্র স্বীকৃতি পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
-
জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ শতাংশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
-
ব্রিটিশ ও ফরাসি স্বীকৃতির পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চারটির সমর্থনই পাবে ফিলিস্তিন। (চীন ও রাশিয়া আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে।)
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বীকৃতির সিদ্ধান্তকে “হামাসের সন্ত্রাসবাদের উপহার” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও স্পষ্টভাবে এর বিরোধিতা করছে।
-
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে শক্তিশালী করবে।
-
ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিপক্ষে অবস্থান করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার মতানৈক্য রয়েছে।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
-
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট (১৯২২–১৯৪৮) থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের সময় থেকেই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনা চলমান।
-
আন্তর্জাতিক মহলের প্রস্তাব ছিল, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগের বিভাজনের ভিত্তিতে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন, আর পূর্ব জেরুজালেম হবে রাজধানী।
-
তবে দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব ও পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের কারণে এ সমাধান কার্যত ফাঁপা বুলি হয়ে উঠেছে।
কেন এখন স্বীকৃতি?
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে যখন তা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে।
-
গাজায় দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়,
-
ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক আগ্রাসন,
-
এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
যদিও বাস্তবে স্বীকৃতির ফলে অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি বদলাবে না, তবে প্রতীকী দিক থেকে এটি একটি কূটনৈতিক মাইলফলক। একে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
