প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ পরিচালিত বহর ইসরায়েলের দ্বারা আটকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বহরের ত্রাণবাহী জাহাজগুলোতে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা ছিলেন, যাদের অনেককে আটক করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম ও সহনশীলতা নির্দেশ করে যে, এই অভিযান কেবল মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টাই নয়, বরং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ও ‘সুমুদ’—অটল থাকা ও দৃঢ়তার দর্শন—কে নতুন করে সামনে এনেছে।
সুমুদ: ইতিহাস ও ধারণা
ফিলিস্তিনিদের ‘সুমুদ’ ধারণা ১৯৪৮ সালের নাকবা থেকে শুরু হয়ে ১৯৬৭ সালের নাকসা পর্যন্ত দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল। নাকবা (মহাবিপর্যয়) ও নাকসা (পশ্চাদপসরণ) ফিলিস্তিনিদের জমি ও জীবন হারানোর মানবিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় সুমুদ—একটি মানসিকতা ও জীবনদর্শন, যা প্রতিরোধ, ধৈর্য ও অস্তিত্বের প্রতি অটল থাকার শিক্ষা দেয়।
ফিলিস্তিনিরা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাদের ভূমি, পরিবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখে। ইসরায়েলি বাহিনী ঘরবাড়ি ধ্বংস করলেও, তারা পুনর্নির্মাণ ও পুনর্চারণের মাধ্যমে প্রতিরোধ চালিয়ে যায়।
সুমুদ দুই রূপে
১. অটল সুমুদ: ইসরায়েলি দখল ও বসতি স্থাপনের চাপের মধ্যেও ভূমিতে টিকে থাকা।
২. প্রতিরোধমূলক সুমুদ: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও কর না দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সক্রিয় প্রতিরোধ।
১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সালের প্রথম ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি গণবিদ্রোহে সক্রিয় সুমুদের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
শিল্প ও সাংস্কৃতিক প্রকাশ
ফিলিস্তিনি চিত্রশিল্পী স্লিমান মানসুর ও শিল্পী আইমান আল-হোসারি তাদের শিল্পকর্মে সুমুদ ধারণাকে ফুটিয়ে তোলেন। ধ্বংসস্তূপে আঁকা ক্যালিগ্রাফি, মুরাল ও চিত্রকর্ম ফিলিস্তিনিরা সংকট ও নিপীড়নের মধ্যে অটল থাকার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।
শিল্পীর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা প্রেরণ করেন, যা মানবিক মর্যাদা, আশা ও প্রতিরোধের প্রতীক।
ফ্লোটিলা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেন,
“ফিলিস্তিনিরা ৭৮ বছর ধরে দখলের মধ্যে অটল। তাদের দৃঢ়তা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমরা এই বহরের মাধ্যমে তাদের প্রতিরোধের শক্তি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে চাই।”
ফ্লোটিলার লক্ষ্য কেবল ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজকে দেখানো যে ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিনের জীবনে দৃঢ় ও অবিচল।
উপসংহার
গাজায় ধ্বংস ও মানবিক সংকটের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা তাদের পরিচয়, ভূমি ও সংস্কৃতি রক্ষা করছে। ‘সুমুদ’ তাদের সংগ্রামের অন্তর্নিহিত শক্তি ও অটল মনোবলের প্রতীক। আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা অভিযান এই ধারণাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে এনেছে, যেখানে প্রতিরোধ ও মানবিক মর্যাদার বার্তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
সূত্র: গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, আল জাজিরা, নেহাল আলতরহুনি, ফিলিস্তিনি শিল্পী ও গবেষক
									 
					