প্রকাশের তারিখ: ৪ অক্টোবর ২০২৫
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
মারমা কিশোরীর ধর্ষণ মামলা কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় খাগড়াছড়িতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন যুবক। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও পরিবহন। এ ঘটনায় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাজেকসহ পুরো জেলায় পর্যটন খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
সহিংসতার প্রেক্ষাপট
- 
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ নামের একটি পাহাড়ি সংগঠন খাগড়াছড়িতে অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেয়।
 - 
উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
 - 
২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় সংঘটিত সহিংসতায় তিন পাহাড়ি যুবক নিহত হন। আহত হন সেনাবাহিনী, পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন।
 - 
অগ্নিসংযোগে বহু ঘরবাড়ি, অফিস, গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুড়ে যায়।
 
পর্যটন খাতে ব্যাপক ক্ষতি
পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় সাজেকে প্রায় ২,১০০ এবং খাগড়াছড়ি সদরে সহস্রাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। নিরাপত্তাবাহিনীর সহায়তায় তাদের গন্তব্যে পাঠানো হলেও পর্যটন ব্যবসায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
- 
খাগড়াছড়ি শহরের সুপরিচিত হোটেল ‘গাইরিং’-এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা জানান, সহিংসতার কারণে সপ্তাহজুড়ে সব বুকিং বাতিল হয়ে হোটেল সম্পূর্ণ খালি পড়ে ছিল। জেলার প্রায় ১৫–২০টি হোটেল একই অবস্থায় পড়ে।
 - 
জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে প্রতিদিন সাজেকে ২০০–২৫০টি গাড়ি যাতায়াত করে, প্রতিটির ভাড়া প্রায় ১০ হাজার টাকা। দৈনিক ২০–২৫ লাখ টাকার ব্যবসা হতো। সহিংসতার কারণে ৮–৯ দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
 - 
প্রায় তিন হাজার পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ায় সমিতির পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।
 
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা
একজন শীর্ষ পর্যটন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “প্রায়ই পাহাড়ি আঞ্চলিক দলগুলোর সংঘাত এবং পাহাড়ি–বাঙালি সহিংসতায় পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবারই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এতে পর্যটনের অগ্রগতি থমকে যায়।”
গত বছরও (১৯ সেপ্টেম্বর) একই ধরনের সহিংসতায় খাগড়াছড়ি ও সাজেকে টানা ১৪ দিন পর্যটকশূন্য পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখনও পর্যটন ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ তাদের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
- 
সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর জানান, শুক্রবার সাজেকে ৩০–৩৫টি পর্যটকবাহী গাড়ি এসেছে।
 - 
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, “পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। দ্রুতই ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে। আশা করি অচিরেই পর্যটকের আগমন আগের মতোই বাড়বে।”
 
🔹 উপসংহার: খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ঘনঘন সহিংস ঘটনায় এই শিল্প বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা না ফিরলে এই খাতের টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়।
									 
					