প্রকাশের তারিখ: বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না থেকেও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অন্তত ১২৭ জন ‘জুলাই যোদ্ধা’র গেজেট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এই তালিকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে তাঁদের গেজেট বাতিল করা হতে পারে। এটি হবে জুলাই আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারি গেজেট বাতিলের ঘটনা।
🔹 বাতিলের প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি নেত্রকোনার একটি উপজেলা থেকে তিন তরুণ মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ করেন যে, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ঘোষিত ভাতা পাচ্ছেন না। যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, জেলা কমিটি তাঁদের গেজেট বাতিলের সুপারিশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বৃহৎ শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা ঘিরে।
🔹 তদন্ত ও যাচাই-বাছাই
তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। অভিযোগ ছিল—অনেকেই আন্দোলনে আহত হননি, কেউ সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি, আবার কেউ চিকিৎসা সনদ ছাড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জেলা কমিটি, পুলিশ, সিভিল সার্জন, জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা নিয়ে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
🔹 বাতিলের বিশ্লেষণ
- 
বাতিলের সুপারিশকৃত ১২৭ জনের মধ্যে ১০৪ জন আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না।
 - 
২৩ জনের নাম একাধিকবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
 - 
সর্বাধিক বাতিলের সুপারিশ এসেছে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৩৯ জন, যেখানে ৩৫ জনই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
 - 
অন্যান্য বিভাগ: সিলেট ২৭, ময়মনসিংহ ২১, ঢাকা ১৪, রাজশাহী ১৩, খুলনা ৯, বরিশাল ও রংপুর সর্বনিম্ন।
 - 
বাতিলের জন্য সুপারিশকৃতদের অধিকাংশ ‘গ’ শ্রেণির (আহত) জুলাই যোদ্ধা।
 
মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন,
“আগের তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে যে তালিকাভুক্তদের কেউ কেউ প্রকৃতপক্ষে আহত ছিলেন না বা আন্দোলনে অংশই নেননি। সরকার এ বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
🔹 সরকারি পদক্ষেপ
- 
গত ৩ আগস্ট শহীদদের তালিকা থেকেও আটজনের নাম বাতিল করা হয়েছিল।
 - 
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাঠান।
 - 
স্থানীয় কমিটি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং প্রাপ্ত অভিযোগ মিলিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
 
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি শুধু প্রথম ধাপ। আরও অনেকের নাম পুনর্বিবেচনায় থাকবে। প্রকৃত আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে নতুন ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে।
🔹 বর্তমান পরিসংখ্যান
- 
সরকারি হিসাব অনুযায়ী ‘ক’ (অতি গুরুতর আহত), ‘খ’ (গুরুতর আহত) ও ‘গ’ (আহত) শ্রেণিতে মোট ১৩,৮০০ জন জুলাই যোদ্ধা রয়েছেন।
 - 
মন্ত্রণালয় মনে করছে, যাচাই-বাছাই শেষে এই সংখ্যা আরও কমতে পারে।
 
🔹 প্রভাব ও উদ্দেশ্য
এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ভুয়া দাবি ও অপব্যবহার কমানো হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের মর্যাদা নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হবে।

