মঙ্গলবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশের তারিখ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫

রাজ্যীয় একটি আনুষ্ঠানিক নথি ও গণমাধ্যম রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে (বিএএফ) আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই (J-10CE) মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্পূর্ণ চুক্তি — বিমান, প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচসহ — মোট প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

চুক্তির ভাণ্ডারবর্ণনা ও অর্থায়ন

গণপত্রে প্রকাশিত খসড়া হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি বিমান প্রাক্কলিত ৬ কোটি ডলার মূল্যের হিসেবে ২০টি বিমানের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা)। স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও পরিবহন খরচ হিসাবে আরো ৮২ কোটি ডলার (প্রায় ১০,০৮৬ কোটি টাকা) ধরা হয়েছে; বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাবে। অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত বরাদ্দ ২০৩৫–৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত কিস্তিতে পরিশোধ করার স্বপেক্ষায় পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ক্রয়পদ্ধতি, সময়রেখা ও সরকারের প্রস্তুতি

চুক্তিটি সরাসরি ক্রয় বা জিটুজি (G2G — সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে চীন সরকারের সঙ্গে করা হতে পারে। নথিপত্রে উল্লেখ যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২৫–২৬ ও ২০২৬–২৭ অর্থবছরে। চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত এপ্রিলে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে; কমিটি খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা, দরকষাকষি ও চূড়ান্তকরণ করবে।

কেন জে-১০ সিই — সামরিক ও কৌশলগত গুরুত্ব

জে-১০ সিই হচ্ছে চীনের জে-১০ সিরিজের রপ্তানি সংস্করণ; ৪.৫ প্রজন্মের এই মাল্টি-রোল ফাইটারজেটকে বিশ্বব্যাপী একাধিক দেশ পর্যবেক্ষণ করছে। চলতি বছরের মে মাসের ভারত-পাক কেনাকাটায় জে-১০ সিরিজের উল্লেখ ও যুদ্ধক্ষেত্রে কয়েকটি দাবি আলোচনার কেন্দ্র ছিল—যা এই বিমানবেগের আন্তর্জাতিক মনোযোগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জে-১০ সিরিজ যুক্ত হওয়া বাংলাদেশ বিমানের সক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

প্রতিক্রিয়া — নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সরকারের বক্তব্য

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) বলেছেন, বিএএফ-এর দীর্ঘদিনের অস্ত্রসজ্জা আধুনিকায়নের প্রয়োজন আছে; কিন্তু ক্রয়ের আগে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিণতি বিবেচনা করা জরুরি—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা থাকা অবস্থায়। তিনি সতর্ক করেন যে সরঞ্জামচয়ন কেবল সামরিক দিক নয়, কূটনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাবও বিবেচনায় নিতে হবে।

সরকারি আরো এক সূত্র জানিয়েছে, সম্ভাব্য চুক্তির আওতায় সংরক্ষণ সহায়তা, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য লজিস্টিক সমর্থন সংযোজন থাকবে—এবং পেমেন্ট টার্মস, দামের চূড়ান্তকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি নিয়ে চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষি হবে।

পটভূমি ও সম্ভাব্য প্রভাব

বর্তমানে বিএএফ-এর বহরে মোট প্রায় ২১২টি বিমানের মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট আছে; এর মধ্যে ৩৬টি চীনে নির্মিত এফ-৭ মডেল। জে-১০ সিরিজ যুক্ত হলে ফ্লিটে আধুনিকায়ন দ্রুততর হবে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা-ক্ষমতা বাড়বে—তবে এই সিদ্ধান্তকে আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য ও কূটনৈতিক বলয় পরিবর্তনের প্রসঙ্গে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়লে প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য শক্তিগুলোর উদ্বেগ বাড়তে পারে।


সংক্ষেপে: সরকার চীনের কাছ থেকে ২০টি জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে; প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২.২ বিলিয়ন ডলার (≈ ২৭,০৬০ কোটি টাকা)। চুক্তি জিটুজি পদ্ধতিতে হতে পারে, এবং বাস্তবায়ন/পরিশোধ ১০ বছরের কিস্তিতে (২০৩৫–৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত) পরিকল্পিত। গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি দরকষাকষি ও চুক্তি চূড়ান্ত করবে; একই সঙ্গে কৌশলগত প্রভাব ও ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনাও গুরুত্ব পাবে।

সূত্র: The Business Standard, Defense News, Dhaka Tribune (রিপোর্টিং ও সরকারী নথি উদ্ধৃতি)

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version